‘জোড়াতালি দিয়ে ওই সেতু বানানো হচ্ছে, কেউ উঠবেন না’-বিএনপি চেয়ারপারসনের এই কথার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আজকে পদ্ম সেতু তৈরি হচ্ছে, সেটা নাকি জোড়াতালি দিয়ে!
“হ্যাঁ, একদিক দিয়ে ঠিক। যেহেতু এক একটা পার্ট তৈরি করে একেকটা বসায়। যার এইটুকু জ্ঞান নেই, একটা জিনিস নির্মাণ করতে হলে কীভাবে কী পদ্ধতিতে করতে হয়, যার মাথায় ওই টুকু ঘিলু নাই। উনার মাথায় যে ঘিলু আছে সেটা কিসের? চুরি করা, টাকা বানানো, এতিমের টাকা খাওয়া, মানুষ পোড়ানো, মানুষ মারা…।”
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, “এখন তারা পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে এই সেতু হবে না। কোন একটা যদি জোড়াতালি বানায় সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না, অনেক রিস্ক আছে।”
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোনোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির দোষারোপ করার পর আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। সৎ সাহস ছিল বলেই চ্যালেঞ্জ দিতে পেরেছি।
“চ্যালেঞ্জ দিয়ে আমরা যখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করি তখন আপনারা শুনেছেন খালেদা জিয়া বক্তৃতা দেয়, ওই পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে করা হচ্ছে। কেউ পদ্মা সেতুতে উঠবেন না।”
আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রধানকে নিয়ে তিনি বলেন, “একটা সেতু বানানোর মতো ওই ক্ষমতা তার নাই। এটা হল উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন উনার কথার মাধ্যমে। যার মাথায় এতটুকু বুদ্ধি আছে, সেন্স আছে, সে যদি সজ্ঞানে বলে থাকে তাহলে একথা বলত না, ঠিকই বলত না।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি শাসনামলে তা ‘করতে না পারার’ও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “একটা ব্যাপারে তারা পারদর্শী- অর্থপাচার করা। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক ঘুষ খেয়েছে ও অর্থপাচার করেছে-এটা আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে প্রমাণিত হয়েছে। যার জন্য বিচারে সাজা হয়েছে। আরেক ছেলে (অর্থপাচার) ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে। দুই ছেলে দুই রত্ন।”
খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনিও কম যান না, এতিমের টাকা মেরে দিয়ে বেশ দিব্যি… এই যখন মানসিকতা তারা দেশের মানুষকে কী দেবে?
“তারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে, উপকার করতে পারে না।”
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুই উদ্যোগী হয়ে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। রাষ্ট্রভাষার জন্য আন্দোলনের আগেই তিনি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
“ছাত্রলীগের জন্ম হচ্ছে, এই বাংলাদেশের মানুষের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার লক্ষ্য নিয়ে। সেই ভাষা সংগ্রামের পথ ধরেই ধাপে ধাপে বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃতত্বেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।”
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম ও অর্জনে ছাত্রলীগের আত্মত্যাগ রয়েছে।”
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের পথচলা শুরু। এ বছর সংগঠনটি ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “অনেকেই বলে থাকে যে, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে। জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র ছিল কারফিউ গণতন্ত্র। কারণ প্রতি রাতে কারফিউ হত। আর বহুদল মানে ওই যে আল-বদর, রাজাকার, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে এদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। ১৯৯৬-২০০১ আমরা যখন ক্ষমতায় এই ছাত্রলীগের হাতে আমি অস্ত্র না, অর্থ না, বই-কাগজ-কলম তুলে দিয়েছিলাম।
সে সময় নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কাজে লাগানোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘দেশকে পিছিয়ে নেওয়ায়’ খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “সাক্ষরতার হার ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে নিয়েছিলাম। যেই ২০০১ এ খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসলো সেই সাথে সাথে আমাদের সাক্ষরতার হার কমিয়ে দিল।
“কেন কমালো সেকথা আমি বহুবার বলেছি। পাশ করেছিল উর্দু আর অংকে। কারণ উনার মনটাই পড়ে থাকত পাকিস্তানে। তার হৃদয় হচ্ছে পেয়ারে পাকিস্তান। তাই উর্দুতে পাশ করেছে। আর ক্ষমতায় থাকলে টাকা পয়সা কত নেবে, কত বানাবে ওইটার দিকে নজর। তাই অংকটাই করেছে।”
“২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে দেখলাম, সাক্ষরতার হার ৪৪ ভাগে নেমে এসেছে।”
সেখান থেকে সাক্ষরতার হার ও উচ্চ শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পঁচাত্তরের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জট, ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা সরকার গঠন করার পর এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি।”
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “প্রগতির পথে এগোতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে আমরা উন্নতি করবো কীভাবে?
শিক্ষা, শান্তি, গ্রগতি ছাত্রলীগের এই তিন মূলনীতি ধরে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেককে খেয়াল রাখতে হবে যার যার নিজের বাড়িতে গেলে আশপাশের কেউ যদি নিরক্ষর থাকে তাকে অন্তত অক্ষর জ্ঞান দেওয়া এবং ছেলে-মেয়েদের উৎসাহিত করা পড়াশোনার দিকে।”
গণভবনের মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটেন ছাত্রলীগের নেতারা। তার আগে ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।
এদিন ঢাকা শহর ব্যতীত সারা দেশে ছাত্রলীগের সব শাখা আনন্দ শোভাযাত্রা করে বলে দপ্তর সম্পাদক দোলোয়ার হোসেন শাহজাদা জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণ জনগণের যেন কোনো রকম দুর্ভোগ না হয়, সেজন্য আজ ঢাকা শহর বাদে অন্যান্য ইউনিটের আনন্দ র্যালি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। আগামী শনিবার ছুটির দিনে ঢাকা শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।”