প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য এই সীমা ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ থেকে ৮৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
বুধবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর ফজলে কবির এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সভায় ব্যাংকগুলোর বেপরোয়া বা আগ্রাসী ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত সীমার অনেক বেশি হারে ঋণ বিতরণ করেছে। আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করলে আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হতে পারে।
সে কারণেই সভায় প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণ-আমানত সীমা ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৮ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা, বিলাসবহুল পণ্য আমদানির বদলে প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত পণ্য আমদানি, মুদ্রানীতি হালনাগাদ, এক্সচেঞ্জ রেটসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান সুর চৌধুরী।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, নতুন করে যে পরিমাণ আমানত আসছে, কয়েকটি ব্যাংক তার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করছে। অর্থাৎ ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা অতিক্রম করছে ওই ব্যাংকগুলো।
এভাবে আগ্রাসী ব্যাংকিং করায় গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকিতে পড়ছে। এতে পুরো ব্যাংক খাতে আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হয়ে যাচ্ছে।
ঋণের অর্থ জোগান দিতে অনেক ব্যাংক বিভিন্ন বিল ও বন্ডে থাকা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে।
এদিকে আমানতের সুদ হার কমে যাওয়ায় অনেকটা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়ছেন গ্রাহকরা। সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগে সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। ঝুঁকি নিয়ে অনেকে শেয়ারবাজার ও সমবায় সমিতিতেও অর্থ বিনিয়োগ করছেন। আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি হওয়ায় কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্যাংকগুলোর ডিসেম্বর ভিত্তিক ঋণ আমানতের সম্মিলিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ অক্টোবর ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বর্তমানে আমানতের তুলনায় ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকের ১২ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ বেড়েছে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক যেখানে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারে, সেখানে এসব ব্যাংক ইতোমধ্যে৮৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ ঋণ দিয়েছে। আর ইসলামী ব্যাংকগুলো ৯০ শতাংশ দিতে পারে, এর বিপরীতে সেগুলো দিয়েছে ৮৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে ‘ব্যাংকার্স মিটিং’ নামে পরিচিত এই বৈঠকে সরকারি, বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন।