টেলিকমে ‘ক্যান্সার’, সারাতে চান মোস্তাফা জব্বার

বাইরে থেকে যতটা জানতেন, টেলি যোগাযোগ বিভাগে সমস্যা আরও বেশি বলে এখন মনে হচ্ছে মোস্তাফা জব্বারের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2018, 02:28 PM
Updated : 4 Jan 2018, 02:16 PM

তিনি মনে করেন, সেই সমস্যা থেকে উত্তরণেই তাকে এই বিভাগের মন্ত্রী করার ‘দুঃসাহসী’ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন।

টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে মঙ্গলবার তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মোস্তাফা জব্বারের শপথ নেওয়া অনেকটা চমকের মতোই ছিল। তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাকে দেওয়ার বিষয়টি অনুমিতই ছিল।

বুধবার মন্ত্রণালয় পাওয়ার পর বিকালে বেসিস মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যান মোস্তাফা জব্বার। এই সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সভাপতি মন্ত্রী হওয়ায় এই সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।

অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার তার নতুন দায়িত্ব নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার একদিনের (মন্ত্রী) অভিজ্ঞতা, আমি বাইরে থেকে যা জানতাম, আমাদের সরকারের এই আইটি রিলেটেড এরিয়াতে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি সমস্যা হচ্ছে।

“আমি ধারণা করতে পারি নাই টেলিকম ডিভিশনে ক্যান্সারের মতো সমস্যা বিরাজ করে, আর তা সমাধান করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমার নিজেরে কাছে দুর্ভাগ্যজনক মনে হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের সাথে যুক্ত কর্মকর্তারা, আমাদের নুরুল কবির (অ্যামটব মহাসচিব) পর্যন্ত তারা প্রত্যেকে এক্সপ্রেশন দিয়েছেন, কানাগলির ভেতরে বসে আছি।”

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছিল রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে; সাড়ে তিন বছর পর ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাহারা খাতুনকে।

২০১৪ সালে নতুন করে সরকার গঠনের পর আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পান এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তিনি বাদ পড়ার পর তারানা হালিমকে প্রতিমন্ত্রী করা হয় এই মন্ত্রণালয়ে।

সরকারের মেয়াদ আর এক বছর থাকতে আবার পরিবর্তন এল এই মন্ত্রণালয়ে।  

এক বছরে দুই বিভাগের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবেন কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “কানাগলির শেষ দেয়াল যদি ভেঙে দেওয়া যায়, তাহলে কানাগলিটা ছুটে যাবে, দেয়ালটা ভাঙলে পারলে অনেকটা অর্জন হবে। আমরা কোথাও আইসিটি খাতে ব্যর্থ হইনি, একটু সময় লেগেছে, আমার মন্ত্রী হতেও সময় লেগেছে।

“আমাকে মন্ত্রী বানানোর জন্য লবিং ছিল না, স্লোগান ছিল না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন তার সম্মানটুকু রাখার দায়িত্ব আমার।”

নতুন মন্ত্রী বলেন, “আপনারা আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বুঝতে পারবেন প্র্যাকটিক্যালি আইসিটি ও টেলিকম ডিভিশনের ভেতরে ভেতরে ঘুনে ধরা বিষয় ছিল বলেই হয়ত প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের একটি দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

“সরকারের সবাই আইটি ফ্রেইন্ডলি না, তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোস্তাফা জব্বার ১০ মিনিট কথা বললে  আদায় করে নিয়ে আসবেন।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দায়িত্ব পালন করছেন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, মন্ত্রী হলেও তার আচরণে কোনো পরিবর্তন আসবে না। আগের মতোই সবার ফোন ধরবেন বা সময় দেবেন তিনি।

নিজের ব্যস্ততার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “টেলিকম ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রী সেখানে আর নেই, কেন নেই আমি তা বলব না। টেলিকম ডিভিশনে প্রতিমন্ত্রী না থাকায় সেখানে বেশি সময় দিতে হবে। তবে বেশি সময় থাকব আইসিটি ডিভিশনে, কারণ সেখানে সবাই দেখা করতে পারবে।”

প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে; তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক।

ইন্টারনেটকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মোস্তফা জব্বার বলেন, “ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের  হাতের নাগালে নেই, যেভাবে ইন্টারনেট পাওয়ার কথা সেভাবে পাচ্ছে না।

“ইন্টারনেটের গতি থাকতে হবে, সবার সামর্থ্যের মধ্যে থাকতে হবে। এই খাতে যারা যারা আছে তাদের সকলের জট ছাড়িয়ে নিতে পারলে ইন্টারনটে প্রসারে এক বছর সময় লাগবে না।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে সংবর্ধনা  অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমাদের দেশকে ডিজিটাল রূপান্তর করা আমার অধিকার। আমার মন্ত্রণালয়ে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান একতরফা হয়ে কাজ করবে, তা কোনো মতেই না।

“আমি ইংরেজিবিরোধী না, আমার ইংরেজি চর্চাও দরকার, বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে ইংরেজি জানতে হবে। ৯৬ ভাগ ইংরেজি বোঝে না, তাদের কাছে বাংলা কনটেন্ট ছাড়া উপায় নেই।”

“আমাদের দেশে যদি গ্রামীণফোন ব্যবসা করে, যদি টেলিকম ডিভিশনে চিঠি দেয়, তাহলে কেন বাংলায় চিঠি দেবে না, ” বলেন কম্পিউটারে বাংলা কিবোর্ড বিজয়ের প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার।

শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “যে যে সরকারের এ রূপান্তর চায় না, সেখানে হাতুড়িপেটা করতে হবে।”

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বিটিআরসি চেয়ারম্যান ফোন দিয়েছিলেন. তাকে বলেছি প্রথম দিন আমাকে ছাত্র হিসেবে নিবেন, পরে কিন্তু আমি শিক্ষক হব।”

বিটিআরসি ভয়েস কল রেট নির্ধারণ করে দিতে পারলেও ইন্টারনেট মূল্য নির্ধারণ করে দিতে না পারায় সমালোচনা করেন নতুন মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে মোস্তফা জব্বারকে ফুল এবং ক্রেস্ট  দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বেসিস কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, বেসিস সচিবালয় ও বিআইটিএম।

বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, সাবেক সভাপতি এ তৌহিদ, মাহবুব জামান, এস এম কামাল, হাবিবুল্লাহ এন করিম, সারওয়ার আলম, রফিকুল ইসলাম রাওলি, একেএম ফাহিম মাসরুর, শামীম আহসানও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, “জব্বার ভাই তার নেতৃত্বগুণ, তার অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে আমাদের তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের অগ্রগতিতে ব্যতিক্রমী কিছু করবেন, সেই প্রত্যাশা আমাদের। আমাদের শুধু একটাই দাবি জব্বার ভাই যেন আমাদের কাছে জব্বার ভাই হয়ে থাকেন।”

অন্যায় সুপারিশ না করার আহ্বান জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমাকে দয়া করতে অন্যায় করতে বলবেন না।

“আমি এক বছরের মন্ত্রিত্বের জন্য ৬৯ বছরের অর্জন নষ্ট করতে পারব না। বাংলাদেশকে এক বছরের বদলিয়ে দিতে পারব, পুরা সরকারের কাছে দেখিয়ে দিতে পারব কীভাবে বদলে দেওয়া যায়।”