চার বছর দায়িত্ব পালনের পর মন্ত্রিসভার রদবদলে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হারিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আকাশ থেকে তিনি মাটিতে নামলেন।
Published : 03 Jan 2018, 05:18 PM
বুধবার দুপুরে রদবদলের ঘোষণা আসার পর বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারের এই শরিক নেতার এই প্রতিক্রিয়া আসে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন খানিকটা হেসেই বলেন, “আমার জন্য সুখকর এই কারণে বলতে পারেন- আমি আকাশ থেকে একটু মাটিতে নামলাম । সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্নে বলেন, সামাজিক কল্যাণের প্রশ্নে বলেন… একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে। “
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করলে মেননকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার মেননকে সরিয়ে সেই জায়গায় তিনি এনেছেন নতুন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালকে।
মেননের চার বছরে দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে একাধিক ঘটনায়। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণ দেখিয়ে যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের মার্চে ঢাকা থেকে আকাশপথে কার্গো বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যা এখনও ওঠেনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মুনাফা এ বছর কমে আসার পেছনে ওই নিষেধাজ্ঞাও ভূমিকা রেখেছে।
২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী একটি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনাও আলোড়ন তোলে। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ সে সময় বিমানমন্ত্রী মেননের পদত্যাগেরও দাবি তোলেন ফেইসবুকে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেননের ভাষায়, শেখ হাসিনা অনেক ‘হিসেব করেই’ মন্ত্রিসভায় রদবদল এনেছেন।
“বছরের প্রথমভাগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার যে সম্প্রসারণ করলেন ও পরিবর্তন সাধন করলেন, আমার মনে হয় স্বাভাবিকভাবে প্রশাসনে গতিশীলতা আনার জন্য করলেন। এটিই হচ্ছে শেষ বছর আমাদের সরকারের। সুতরাং তিনি চেয়েছেন শেষ বছরের কাজের সমন্বয় আরও ভালোভাবে যেন হয়।”
এই রদবদলে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে পানিসম্পদে এবং জাতীয় পার্টির (এরশাদের) প্রেসিডয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পরিবেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে তারানা হালিমকে সরিয়ে তাকে হাসানুল হক ইনুর মন্ত্রণালয় তথ্যের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
মেননের দপ্তর বদলকে কেউ কেউ ‘অবনমন’ বললেও নতুন সমাজকল্যাণমন্ত্রী বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখতে চান।
তিনি বলেন, “আমি সবচেয়ে কম বাজেটের একটি মন্ত্রণালয়ে (বিমান) ছিলাম। এখন আমি অনেক বড় বাজেটের একটি মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি।… এখানে প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করার অনেক জায়গা আছে। “
গত চার বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মেনন বলেন, “আমার পক্ষ থেকে সিভিল এভিয়েশন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে কাজ করা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। যখন আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন অনেকে তাচ্ছিল্য করেছিল। বন্ধুরা বলত, ‘তোমাকে একটি ডুবন্ত জাহাজ তুলতে দিয়েছে’।”
তার সময়ে সিভিল এভিয়েশনে কী কী অগ্রগতি হয়েছে, তার একটি বিবরণও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মেনন।
“আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমান পরপর তিনবার লাভ করেছে। অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের যাতায়াত বেড়েছে।”
এই দপ্তর বদলের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটির বিষয়টি বা কোনো ব্যর্থতা ভূমিকা রেখেছে কি না- এমন প্রশ্নে মেনন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিমানের যে ঘটনা ছিল, আমরা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। কিছু অবহেলার কারণে এটা হয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে যাদের গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের পরে খালাস দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তদন্তে বলা হয়েছে, তারা নাশকতার সঙ্গে যুক্ত নয়।”
মন্ত্রিসভার রদবদলে কেবল তিন শরিকের পরিবর্তনে জোটে বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না- এ প্রশ্নে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, তেমন কোনো শঙ্কা তিনি দেখছেন না।
এই পরিবর্তনের আভাস আগেই পেয়েছিলেন কি না, এই পরিবর্তনে খুশি কি না- এমন প্রশ্নও রাখা হয় মেননের সামনে।
জবাবে তিনি বলেন, “দেখেন, আমি এক কথায়…। প্রশ্নটা হল… আমি রাজনীতি করি। আমরা সব বিষয়ের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকি।”