তিন বছর পর নতুন একজন মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিচিত মুখ মোস্তাফা জব্বার সেই দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
Published : 02 Jan 2018, 08:31 PM
বিজয় বাংলা কিবোর্ডের প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মোস্তাফা জব্বার।
একই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নারায়ন চন্দ্র চন্দ ও লক্ষ্মীপুরের সাংসদ এ কে এম শাহজাহান কামাল। এছাড়া রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী শপথ নেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে।
তাদের কে কোন দপ্তর পাচ্ছেন তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বুধবার। তবে একাধিক সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মোস্তাফা জব্বার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে ২০১৪ সালের অক্টোবরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে সরিয়ে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ওই মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করে আসছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন আইসিটি বিষয়ে তার উপদেষ্টা হিসেবে।
এ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বে আছেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
আটষট্টি বছর বয়সী মোস্তাফা জব্বার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রার সঙ্গে আছেন শুরু থেকেই।
প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করে আসা জব্বার বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডেরও সদস্য।
আনন্দ কম্পিউটার্সে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন জব্বার। পরের বছর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার যুক্ত করে নেওয়া হয়।
১৯৪৯ সালের ১২ অগাস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামে জন্ম নেওয়া মোস্তাফা জব্বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ওই সময়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
স্বাধীনতার পর সূর্যসেন হলের নাট্য ও প্রমোদ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন জব্বার। বাহাত্তরে ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হলে তিনি জাসদ ছাত্রলীগের অংশে যোগ দিয়েছিলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন জাসদের একাংশের নেতা ডা. মুশতাক হোসেন।
ছাত্রজীবনে সাপ্তাহিক জনতায় লেখালেখিতে যুক্ত থাকা মোস্তাফা জব্বারের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতা দিয়ে, সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায়। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন সময়ে ট্র্যাভেল এজেন্সি, মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসায় যুক্ত হন জব্বার। ট্র্যাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাবের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন একসময়।
মোস্তাফা জব্বার জড়িত আছেন তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ক লেখালেখিতেও। বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে থাকা আইসিটি বিষয়ক বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক তিনি।
তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার কথকতা, ডিজিটাল বাংলা, একুশ শতকের বাংলা, বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, একাত্তর ও আমার যুদ্ধ এবং উপন্যাস নক্ষত্রের অঙ্গার।
লেখালেখি ছাড়াও টেলিভিশনে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে আসছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক এই সভাপতি।
বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশে ভূমিকা রাখায় বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ায় বুধবার বিকাল ৩টায় তার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেছে বেসিস।