শঙ্কিত পদযাত্রা

বন্যা ও পাহাড় ধসের মতো দুর্যোগ, রোহিঙ্গা সঙ্কট, অন্তর্ধান, ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার অস্বস্তিতে ফেললেও রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা না থাকায় অনেকটা স্বস্তিবোধ ছিল মানুষের মধ্যে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2017, 06:09 PM
Updated : 31 Dec 2017, 06:44 PM

সেই ২০১৭ পেরিয়ে সোমবার ভোটের বছর ২০১৮ সালে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা ফিরে আসার শঙ্কাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে মানুষের মনে, যা অর্থনীতির উন্নয়নের গতিকেও আটকে দিতে পারে।

সেই উদ্বেগই ফুটে উঠল নতুন বছর শুরুর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলা অধ্যাপক  সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কথায়।

“নির্বাচন রয়েছে ২০১৮ সালে; এটা নিয়ে তো অনিশ্চয়তার মধ্যেই যাচ্ছি। দুটো পক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো সহনশীলতা দেখছি না। যেখানে সহনশীলতার কোনো আভাস দেখতে পারছি না, সেখানে সংঘর্ষ তো স্বাভাবিকভাবে হবে।”

পঞ্জিকার পাতা ওল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হিসাব-নিকাশও শুরু হয়, কেমন যাবে বছরটি?

সেই হিসাব নিকাশ কষার ক্ষেত্রে রাজনীতির উপরই থাকে সবার নজর, কেননা তার উপরই আবর্তিত হয় রাষ্ট্রের অন্য সব কিছু।

নতুন বছরের বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালকে ‘গৌরবোজ্জ্বল ও সাফল্যময়’ বছর অভিহিত করে তা অব্যাহত থাকার আশাই প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলছেন, অধিকার হারানোর যন্ত্রণা পেরিয়ে আগামী বছর

অধিকার ফিরে পেতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর তাগিদ সৃষ্টি করবে।

সবশেষ চার বছর আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নৈরাজ্য-সহিংসতা দেখতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। পরের বছর আওয়ামী লীগকে হটাতে একই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে পরে ব্যর্থ হয়ে ক্ষান্ত দিয়েছিল বিএনপি।

এরপর বিএনপির গুটিয়ে নেওয়ার মধ্যে রাজনীতির মাঠও নিরুত্তাপ হয়ে পড়ে। তবে সামনে খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতাদের কথায় আভাস, আর ছেড়ে কথা কইবে না তারা।

অন্যদিকে খালেদার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব শেখ হাসিনা নাকচ করে দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভোটের সময় তারাই সরকারে থাকবেন, বিএনপি না এলে তা নিয়ে তাদের করার কিছু নেই।

নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের এই মতানৈক্যের ফল দেশের সব ধরনের অগ্রগতি ব্যাহত করতে পারে বলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আশঙ্কা।

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদও একই শঙ্কা প্রকাশ করে অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলেন।

“২০১৮ সালে রাজনীতি যে কোথায় দাঁড়াবে. সে সম্পর্কে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনে সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে হয় না।”

অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

বিদায়ী বছরের মূল্যায়নে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির ধারবাহিকতা বজায় ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। বৈদেশিক লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। যদিও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, রেমিটেন্সের পরিমাণ অনেক কমে যাওয়ার পর একটু ঊর্ধ্বমুখী।  

তবে বন্যায় ফসলহানি, চালের দাম অপ্রত্যাশিত বেড়ে যাওয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীয় জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ার কথা বলেন তিনি।

আগামীতে খাদ্য পরিস্থিতির সরকারের উপর সতর্ক নজর রাখা দরকার বলেও মত দেন ইকোনমিক রিচার্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। 

ব্যাংক খাতের অস্থিরতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অস্থির বিশৃঙ্খল অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম শক্ত করার বদলে শিথিল করা হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য এটি শুভ ইঙ্গিত নয়।”

সার্বিকভাবে নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালে সরকার বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে আরও উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করে এ অর্থনীতিবিদ।

এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ভোগান্তিও এখনও শেষ হয়নি।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এটা দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। এ সমস্যাকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে নতুন বছরে।”

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালো মেঘ দেখলেও নতুন বছর নিয়ে আশাবাদী সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।

তার ভাষায়, “গণতান্ত্রিক পরিবেশে আন্দোলন হবে, অস্থিরতা থাকবে; আলোচনা করে এর সমাধানও হয়ে যাবে। আমি আশাবাদী মানুষ। আগামীকে সব সময় ইতিবাচক দেখি। দলগুলো নিয়ে নেতিবাচক শঙ্কা থাকবে কেন? আশা করি, ভালো যাবে।”

ফেলে আসা বছরে দৃষ্টিপাত