২০১৭: সাড়া ফেলা ঘটনাগুলো

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2017, 02:42 PM
Updated : 31 Dec 2017, 03:13 PM

রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতায় ২০১৭ সাল স্বস্তিতে পার করতে পারলেও বাংলাদেশকে ২০১৮ সাল শুরু করতে হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিশাল চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে। সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপড়েন আর প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ ছিল বিদায়ী বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সরকারের অসহায়ত্ব নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়েই প্রশ্ন জাগিয়েছে।

এ বছর অর্থনীতির নানা সূচকে আরও এগিয়েছে বাংলাদেশ; কিন্তু সে সাফল্য ম্লান করে দিয়েছে চালের বাজারের অস্থিরতা আর ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা।

বছরের শুরুতে জঙ্গিবাদের নতুন উত্থানের যে শঙ্কা জেগেছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোর হাতে দমন করেছে। কিন্তু বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল গুম আর নিখোঁজ সংবাদ, অভিযোগের আঙুল উঠেছে সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকেই। কয়েকটি ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাও এ বছর বাংলাদেশের মানুষকে নাড়া দিয়ে গেছে।

পুলিশের টিয়ার শেলে কলেজ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের চোখ হারানো, এক আওয়ামী লীগ নেতার মামলায় বরগুনা সদরের ইউএনও তারিক সালমানের  কারবাসকে কেন্দ্র করে প্রশাসনে তোলপাড় এবং অনলাইন গেইম ব্লু হোয়েল নিয়ে আতঙ্ক ছিল এ বছরের অত্যতম ঘটনা। 

বিদায়ী বছরে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু দেখতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া বহু মানুষের হাড়ে ব্যথা জাগিয়ে চলেছে এখনও। এ সব কিছুর মধ্যেও ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য আনন্দ জুগিয়েছে মানুষকে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট

এর দায় বাংলাদেশের মানুষের নয়, কিন্তু এগারো লাখ রোহিঙ্গার ভার এখন তাদেরই বইতে হচ্ছে।

২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েক ডজন নিরাপত্তা চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে দেশটির সেনাবাহিনী নির্মম দমন অভিযান শুরু করলে নতুন এই সঙ্কটের সূচনা হয়। নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ আর লুটপাট-অগ্নিসংযোগের মধ্যে প্রাণ হাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।

ওই অভিযানের কারণে গত চার মাসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে; সৃষ্টি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটের।

 মিয়ানমারের ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। বছরের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ার পর গঠন করা হয়েছে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। ঠিক হয়েছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরু করবে মিয়ানমার।

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকলেও মিয়ানমার বলেছে, আপাতত তারা শুধু নতুন আসাদেরই ফেরত নেবে। কীভাবে তাদের শনাক্ত করা হবে, প্রত্যাবাসনই বা কীভাবে হবে- সেসব বিষয় ঠিক করবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। 

বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এই সঙ্কটে সহায়তা নিয়ে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসও নভেম্বরের শেষে মিয়ানমার ও ঢাকা ঘুরে গেছেন, রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে শুনে গেছেন তাদের দুর্দশার কথা।

এই সঙ্কটে লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে ভূমিকা রেখেছে, তা প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। পোপ ফ্রান্সিসও বলে গেছেন, পুরো বিশ্বের উচিৎ এই সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে থাকা। 

দেশ ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সামনে বিচারপতি এস কে সিনহা

বিচারালয়ে ভূমিকম্প

বাংলাদেশে আর কখনও কোনো প্রধন বিচারপতিকে নিয়ে এত আলোচনা হয়নি; আর কোনো প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগও করতে হয়নি।

পৌন তিন বছর ধরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু কার্যকাল শেষ হওয়ার ৮১ দিন আগেই তাকে পদত্যাগ করতে হয় নজিরবিহীন এক পরিস্থিতির মধ্যে।

অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মীর সঙ্গে বাদানুবাদ, বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ আনা, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধ, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে উত্তেজনা- এরকম বহু ঘটনায় বিচারপতি সিনহা বহুবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন।

সর্বশেষ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে অক্টোবরের শুরুতে তিনি ছুটিতে যান। সরকারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টেবর তিনি রীতিমত বোমা ফাটিয়ে বিদেশে চলে যান।

বিচারপতি সিনহা বলে যান, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’। তার ছুটির মেয়াদ শেষে ১১ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।

পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ওই সব অভিযোগের ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ তিনি না দিতে পারায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে এজলাসে বসতে রাজি ছিলেন না। আর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, বিচারপতি সিনহার দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দিয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার হাতে। যতদিন নতুন প্রধান বিচারপতি শপথ না নিচ্ছেন, ততদিন সর্বোচ্চ আদালতের কর্তৃত্ব আবদুল ওয়াহহাব মিঞার হাতেই থাকছে।

বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা দায়িত্বে আসার পর বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট নিয়ে সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েনের অবসান ঘটেছে।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেওয়া অবৈধ ঘোষণার যে রায় নিয়ে সঙ্কট জটিল মাত্রা পেয়েছিল, সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও করেছে সরকার।

পরীক্ষার আগে কেন্দ্রের সামনে জটলা পাকিয়ে প্রশ্ন-উত্তর দেখছেন শিক্ষার্থীরা

প্রশ্নফাঁসের মহামারি

এইচএসসি, এসএসসির পর জেএসসি-পিইসির গণ্ডি ছড়িয়ে প্রশ্নফাঁসের রোগ এ বছর ছড়িয়ে পড়েছে প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষাতেও।  

নানা উদ্যোগের পরও বিভিন্ন পাবলিক বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেই চলে আসছে ফেইসবুকে। সেই প্রশ্ন সংগ্রহ করে নিজের সন্তানের হাতে তুলে দেখা যাচ্ছে অভিভাবকদের।  

কোনোভাবেই কিছু করতে না পেরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে অসহায়ত্ব। তিনি দুষছেন শিক্ষকদের। আর দুদক অনুসন্ধান করে বলছে, এর পেছনে কোচিং ব্যবসারও বড় ভূমিকা রয়েছে।  

আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নফাঁসে জড়িত সন্দেহে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু কেন প্রশ্নফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না- সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।  

প্রথম দিকে অর্থের বিনিময়ে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে শিক্ষার্থীদের কাছে আগের রাতে প্রশ্ন আসা শুরু করলেও এক পর্যায়ে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয় বিনামূল্যে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বিলি চলে হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও। পরদিন পরীক্ষায় সেসব প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার খবর আগে পেয়েও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমালোচিত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বছরের শেষ এসে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ব্যাপকতা পায়। প্রাথমিক সমাপনীর শেষ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নও পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয় একটি ফেইসবুক পেইজে।

জুন মাসে ‘প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত’ নয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা জানায়, বিজিপ্রেসের এক কর্মচারীকে নিয়ে একটি চক্র গড়ে উঠেছিল। পাবলিক পরীক্ষার ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ফল পাল্টে দেওয়ার‘ নামে প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে অগাস্টে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রনেতাসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়। ছাত্রলীগের একজন কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন গ্রেপ্তার হন।

পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে- তা স্পষ্ট হয় বছরের শেষে এসে নাটোর, মুন্সীগঞ্জ ও বরগুনার পাঁচ শতাধিক স্কুলে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবরে।

গত কয়েক বছরে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ‘ব্যর্থতার’ সমালোচনার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বছরের শুরুতে বলেছিলেন, এবার এ ধরনের চেষ্টা দেখলে হাত ভেঙে দেওয়া হবে।

আর বছরের শেষে এসে তিনি বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পরামর্শ আসছে। এর মধ্যে পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করার পর প্রশ্নপত্র পাঠানোর বিষয়টিও রয়েছে।

“তবে শিক্ষকই যখন প্রশ্ন ফাঁসকারী, তখন আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্ন পাঠিয়ে কী লাভ?”

চাল নিয়ে চালবাজি

তিন দফা বন্যা ২০১৭ সালে বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে শস্য উৎপাদনে। এই পরিস্থিতিতে চালের বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছে।   

বছরের শুরুতে যেখানে মোটা চালের দাম ছিল গড়ে ৩৫-৩৬ টাকা, সেখানে বছরের শেষে এসে বাজারে ৪৮ টাকার নিচে এক কেজি চালও মিলছে না। ভালো মানের চালের জন্য গুণতে হচ্ছে কেজিতে ৬০ টাকার বেশি।

বছরের শুরুতে উত্তরে আকস্মিক ঢল আর মধ্যভাগে ৩২ জেলায় বন্যার পর মজুদ তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক কমিয়ে এনেছে অনেকটাই। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ভাবেও চাল কেনা হচ্ছে বিদেশ থেকে। 

কিন্তু তাতেও চালের বাজারে অস্থিরতা না কমায় সরকারের পক্ষ থেকেই মিল মালিক আর ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়। উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন চালকলে চালানো হয় অভিযান। 

তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে অক্টোবরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রশাসন। সেই সঙ্গে আমদানি করা চালের প্রভাবে বাজারে চালের দাম সামান্য কমে।

নভেম্বরে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন,  চালের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকার মধ্যে আনার চেষ্টা করছে সরকার।

বাজারের এই পরিস্থিতে বছরের শেষভাগে ঊর্ধ্বগামী হয় পেঁয়াজের দাম। বছরের শুরুতে যেখানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ২৫-৩০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ২০-২২ টাকা ছিল, তা বেড়ে ১৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। শীত শুরুর পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় এখন ৭০- ৮০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

এ বছর গ্যাস-বিদ্যুতের দামও দৈনন্দিন খরচ বাড়িয়েছে, যা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে মানুষের মনে। ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন খাতে গ্যাসের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আর নভেম্বরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় দুই দফা হরতালও করে বামদলগুলো।

পাহাড়ে লাশের মিছিল

হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যার পর বছরের মাঝামাঝি মৌসুমি বন্যা, সঙ্গে নিয়মিত বিরতিতে সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় মিলিয়ে বিদায়ী বছর জুড়ে দেশের সবপ্রান্তে ছিল দুর্যোগের হানা।

এবছর মে মাসে এসে বজ্রপাতে প্রাণহানি ছিল অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে একদিনেই ১৬ জনের মৃত্যু হয়। তাপদাহ শেষ করেই মে মাসের শেষে আসেঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র মহাবিপদ সংকেত। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দেশজুড়ে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

দুর্যোগের এই বছরে জুন মাসে ভারি বৃষ্টিতে পার্বত্য অঞ্চলে পাহড় ধসে প্রাণহানি পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও মৌলভীবাজার জেলায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ১৬০ জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যেরাঙামাটিতেই মৃত্যু হয় ১২০ জনের।

১১ জুন ৩৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় রাঙামাটিতে; গত ৫০ বছরে একটানা এত বৃষ্টি হয়নি। পাহাড়ি ঢলে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটি ও বান্দরবানসহ কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ে গাছ নিধনের পাশাপাশি পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনের কারণে ভারি বৃষ্টিতে ধসের ঘটনা বাড়ছে। পাহাড় ধসে যেন আর ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্যস্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার ঘোষণা এসেছে সরকারের তরফ থেকে।

এবার এপ্রিলের শুরুতে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের বিস্তির্ণ হাওর এলাকা তলিয়ে যায়। এরপর জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে মৌসুমের প্রথম বন্যায় অন্তত ১৩ জেলার অনেক উপজেলা প্লাবিত হয়। আর অগাস্টের বন্যায় ৩২ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পৌনে এক কোটির বেশি মানুষ।

সিলেটের আতিয়া মহলে সেনা কমান্ডোদের অপারেশন

জঙ্গিবাদ: প্রতিরোধপর্ব দ্বিতীয় বছরে

গতবছর গুলশান হামলার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় চলতি বছরের শুরু পরিস্থিতি শান্তই ছিল। কিন্তু ৭ মার্চ কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার ঘটনায় জঙ্গিদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার ইংগিত পাওয়া যায়। 

ওই মাসেই ঢাকার আশকোনায় র‌্যাবের একটি ব্যারাকে, খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’য় র‌্যাবের  চেকপোস্টে এং মার্চের শেষ দিকে ঢাকায় বিমানবন্দর পুলিশ বক্সের সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এই প্রেক্ষাপটে মার্চে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সিলেটের শিববাড়ি, মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাট,  কুমিল্লার কোটবাড়ী; এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ; মে মাসে ঝিনাইদহের মহেশপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, জুনে রাজশাহীর তানোর, জুলাইয়ে ঢাকার আশুলিয়া, অগাস্টে ঢাকার পান্থপথে একটি আবাসিক হোটেলে, সেপ্টেম্বরে ঢাকার মিরপুরে, অক্টোবরে শেরপুর ও যাশোরে এবং নভেম্বরে নওগাঁয় জঙ্গি দমনে চলে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান।

এসব জঙ্গি আস্তানার অনেকগুলোতেই বিস্ফোরকের মজুদ পাওয়ার কথা জানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।  এ বছর মোট ১৮টি অভিযানে নিহত হয় ২৮ সন্দেহভাজন জঙ্গি,  গ্রেপ্তার করা হয় ৩৬ জনকে।

ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ সংবাদ

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালেও ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ অনেকে নিখোঁজ হন। অধিকাংশ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়। তবে এ বছর কয়েকজন ফিরেও এসেছেন, যা নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে বিদায়ী বছরে দেশে ৯১ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন দশজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে এবং ৬৫ জনের সন্ধান এখনও মেলেনি।

এত নিখোঁজ সংবাদের মধ্যে  কলামনিস্ট কবি ফরহাদ মজহারের অন্তর্ধান নিয়ে এ বছর রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সব মহলে আলোচনা ছিল। এর জের নতুন বছরেও চলবে।

রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বেরিয়ে ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে ৩ জুলাই সকালে।ওই দিনই ফরিদা আখতার তার স্বামীকে অপহরণের অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যা পরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে নাটকীয়ভাবে যশোরে বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে র‌্যাব-পুলিশ।

খুলনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের দোকানে ফরহাদ মজহারের যাওয়ার এবং ওই এলাকায় তার একাকী ঘোরাফেরার একটি ভিডিও পরে সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে অর্চনা রানি নামে এক নারীকে হাজির করে। নিজেকে তিনি ফরহাদ মজহারের ‘শিষ্য’ বলে দাবি করেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন এবং ১৫ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন।

ফরহাদ মজহার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অপহরণের কথা বললেও পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে ফরহাদ মজহার এবং তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে পাল্টা একটি মামলাও করা হয়েছে।

ঘটনার পাঁচ মাস পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ‘অপহরণ ও উদ্ধারের’ বিবরণ তুলে ধরে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গুম’ করার উদ্দেশ্যে তাকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরালো ভূমিকা রাখলেও পরে ‘চাপ দিয়ে’ স্বীকারোক্তি আদায় করে।

দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ

ধর্ষণ এবং আপন

জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলা ছিল বিদায়ী বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।

ওই ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিচারও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে।  

ওই দুই তরুণীর মধ্যে একজন ঘটনার মাসখানেক পর মামলা করলে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। সাফাতের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ।

পরে আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আমদানির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৭ গ্রাম হীরা জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। দিলদার ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে হয় অর্থ পাচারের মামলা।

অগাস্টে চলন্ত বাসে দল বেঁধে ধর্ষণের পর এক তরুণীকে খুন করে লাশ ফেলে যাওয়ার আরেক ঘটনা এ বছর বাংলাদেশের মানুষকে নাড়িয়ে দেয়।

ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে করে রাতের বাসের সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন ঢাকার একটি আইন কলেজের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপা। বাসের কর্মচারীরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে হত্যা করে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে যায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে।

রূপার লাশ প্রথমে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হলেও তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ পুরো ঘটনা জানতে পারে। বাসের চালক, সুপারভাইজারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার পর  জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বিবরণ পায়। পরে আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়।

বছরের শেষ দিকে এসে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের  প্রবাসী তিনভাইয়ের বাড়িতে ঢুকে তাদের স্ত্রী এবং বেড়াতে আসা এক ননদকে ধর্ষণের ঘটনাও আলোচিত হয়।

তার আগে জুলাই মাসে বগুড়ার শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর মাসহ মস্তক মুণ্ডনের অভিযোগও সারা দেশে আলোচনায় ছিল।

টিভিতে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর ঢাকার নিকেতনের বাসায় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস

বিস্ফোরক শাকিব-অপু

আট বছর ধরে বিয়ের খবর গোপন করেছিলেন তারকা জুটি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। বছরের শুরুতে সন্তানসহ অপু বোমা ফাটান বিয়ের খবর ফাঁস করে। আর শাকিব বছরটা শেষ করেন অপুকে তালাকনামা পাঠিয়ে।

২০১৬ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ নিখোঁজ হন অপু বিশ্বাস। ফোনে কিংবা ফেইসবুকে-কোথাও পাওয়া না গেলেও এ বছর জানুয়ারিতে হঠাৎ ঢাকায় ফিরে চমকে দেন ভক্তদের।

১০ এপ্রিল সন্তান কোলে এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, শাকিব খানের সঙ্গে ২০০৮ সালে তার বিয়ে হয়। তার কোলে শাকিবেরই ছেলে আব্রাহাম খান জয়।বিয়ের কারণে ধর্মান্তরিত হয়ে অপু ইসলাম খান নাম নেওয়ার কথাও বলেন এই চিত্রনায়িকা।

সন্তান কোলে স্ত্রী অপু বিশ্বাসের টিভি লাইভে সব ফাঁস করে দেওয়ার ওই ঘটনার পর নানা রকম কথা বলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে ফেলেন শাকিব। অবশ্য পরে তিনিও সাংবাদিকদের সামনে বিষয়ে কথা স্বীকার করে নেন।  

বছরের মাঝামাঝি থেকেই দুজনের বিচ্ছেদের গুঞ্জন রটে। বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান খোলাখুলিভাবে কিছু না বললেও অপু বিশ্বাস সেসব গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন।

কিন্তু সেই গুঞ্জনটাই সত্যি হয় বছরের শেষ দিকে এসে। আইনজীবীর মাধ্যমে ২২ নভেম্বর অপুর ঠিকানায় তালাকনামা পাঠান শাকিব খান।

শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর বাংলাদেশ দলের উল্লাস

ক্রীড়াঙ্গনের অর্জন

গত কয়েক বছরের মত এবারও বাংলাদেশের মানুষকে আশায় জাগিয়েছে, জয় ছিনিয়ে এনে আনন্দে ভাসিয়েছে ক্রীড়াঙ্গনের বীরেরা।

মার্চে নিজেদের শততম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারায় বাংলাদেশ। টেস্টে প্রথম জয় ধরা দেয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও। এ বছরই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে ওঠে।

অবশ্য ২০১৭ সালে উত্থানের সঙ্গে পতনও দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। নিউ জিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সব ম্যাচ হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই তাদের বছর শেষ করতে হচ্ছে।

জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ড সফরে এবার ক্যারিয়ারের প্রথম ডবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। ওই টেস্টে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়েন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের জুটি।

শ্রীলঙ্কায় প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টসের সময় হঠাৎ করেই এই সংস্করণ থেকে অবসর নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার জায়গায় দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব পান সাকিব। বছরের শেষ দিকে মুশফিককে সরিয়ে টেস্ট দলেরও অধিনায়ক করা হয় এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে।

সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং বীরত্বে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে পৌঁছায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে বছরে এটাই তাদের সেরা সাফল্য।

দেশের মাটিতে অগাস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দারুণ এক জয় তুলে নেয় মুশফিক বাহিনী। দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে যাওয়ায় সিরিজ জেতা হয়নি। এরপর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে বাজেভাবে হারতে হয় সব ম্যাচ।

বিভীষিকার এই সফরের ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই আরও বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সরে যান প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। সাকিব-মাশরাফিদের সামনে এখন প্রধান কোচ ছাড়া নতুন বছর শুরু করার চ্যালেঞ্জ।

ফুটবল-অ্যাথলেটিক্স-শুটিংয়ে তরুণদের জয়গানের বছর ছিল ২০১৭। আর সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে বছরের শেষটা রাঙিয়ে দেয় কিশোরীরা।

ডিসেম্বরের শুরুর দিকে জাপানের এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের রৌপ্য জিতে যুব অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন অর্ণব সারার।
 
গত জুলাইয়ে নাইরোবিতে ওয়ার্ল্ড অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৮.০০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের সেমি-ফাইনালে উঠে চমক দেখান বাংলাদেশের মোহাম্মদ জহির রায়হান।