২০১৭: রোমহর্ষক অভিযান, রহস্যের অন্তর্ধান

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে জঙ্গি প্রতিরোধ পর্বে প্রাথমিক সাফল্য যেমন এসেছে, তেমনি একের পর এক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে ২০১৭ সালে।

গোলাম মুজতবা ধ্রুবকামাল তালুকদার ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2017, 08:45 AM
Updated : 31 Dec 2017, 03:38 PM

এর মধ্যে ঢাকার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে বনানীর একটি অভিজাত হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে এনে ধর্ষণ এবং টাঙ্গাইলে চলন্তবাসে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এছাড়া কাকরাইল ও বাড্ডায় পর পর দুই দিনে জোড়া খুনের ঘটনাও তৈরি করেছে চাঞ্চল্য।

বছরের শেষ দিকে এসে আলোচিত হয়েছে চট্টগ্রামে গভীর রাতে প্রবাসী তিন ভাইয়ের বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের স্ত্রী ও এক বোনকে ধর্ষণ এবং ওই ঘটনায় মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসির বিষয়টি। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে বছরব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ওই নগরীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন সংগঠনটির আরেক নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস।

সারা বছরই দেশব্যাপী ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার নানা ঘটনা ঘটলেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে দুটি ঘটনা-শরীয়তপুরে এক ছাত্রলীগ নেতার ছয় নারীকে ধর্ষণ ও তার ভিডিওধারণ এবং বগুড়ায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর মাসহ তার মাথা মুড়ে দেওয়ার ঘটনাটি।

সিলেটের আতিয়া মহলের অভিযানে অংশ নেন সেনা বাহিনীর কমান্ডোরা

জঙ্গিবিরোধী অভিযান

বছর দেড়েক ব্লগার, লেখক, শিক্ষক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ভিন্নমতের অনুসারী ও বিদেশিদের ওপর একের পর এক হামলার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার পর ‘বিপদের মাত্রা’ বুঝতে পারে সরকার। এরপর দেশজুড়ে শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান, যাতে ওই হামলার প্রধান সন্দেহভাজন জঙ্গি গোষ্ঠী নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরীসহ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে বেশ কয়েকজন নিহত হন।

ব্যাপক অভিযানের মধ্যে বছরের শুরুতে কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও মার্চে জঙ্গিরা নতুন করে তাদের তৎপরতার জানান দিতে শুরু করে। প্রকাশ পায় তাদের নতুন কৌশল, প্রস্তুতির নতুন ধরন।

এরপর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় জঙ্গি আস্তানায় রোমহর্ষক অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।বেশিরভাগ অভিযানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জঙ্গিরা আত্মঘাতী হলেও ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে র‌্যাব-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গুলশান হামলার পর এখন পর্যন্ত ২৬টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়, তার মধ্যে ১৮টি অভিযান হয়েছে এই বছরে। এ বছরের অভিযানে ২৮ জঙ্গি নিহত এবং ৩৬ জন গ্রেপ্তার হন, যেখানে সব অভিযান মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ৫৮ এবং ৫৩ জন।

এ বছর জঙ্গি প্রতিরোধ পর্বের সূচনা হয় ৭ মার্চ কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার মধ্য দিয়ে। এরপর ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ডের দুই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এর মধ্যে এক বাড়িতে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ পাঁচজন নিহত হয়।

১৭ মার্চ আশকোনায় র‌্যাবের একটি ব্যারাকে ঢুকে পড়ার পর শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয় সন্দেহভাজন এক জঙ্গি। ১৮ মার্চ মোটর সাইকেল আরোহী এক ব্যক্তি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’ মোড়ের কাছে চেকপোস্টে ঢুকে পড়ার পর র‌্যাব সদস্যদের গুলিতে নিহত হন। ২৪ মার্চ ঢাকার বিমানবন্দর পুলিশ বক্সের সামনে বিস্ফোরণে নিহত হন এক যুবক। তার সঙ্গে থাকা ট্রলি ব্যাগে পাওয়া যায় আরও বিস্ফোরক।

ওইদিনই সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলার পর চার দিন ধরে অভিযান চলে যাতে অংশ নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা। ওই অভিযান শেষে বাড়ির ভেতর থেকে এক নারীসহ চার জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়। তার আগে ঘটনাস্থলের কাছে বোমা বিস্ফোরণে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও দুই পুলিশসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়।

সিলেটের অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাটে দুই বাড়িতে শুরু হয় অভিযান। এর মধ্যে নাসিরপুরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিনাজপুরের নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা লোকমান হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলিয়ে সাতজন নিহত হয়। আর বড়হাটে এক নারীসহ তিন জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়।

৩১ মার্চ কুমিল্লার কোটবাড়ীতে এক আস্তানায় পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আরেক বাবুসহ চার জঙ্গি নিহত হয়। ৭ মে ঝিনাইদহের মহেশপুরে অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়। ১১ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর হাবাসপুরে এক অভিযানে দুই নারীসহ এক পরিবারের পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। সেখানে অভিযানের প্রস্তুতির মধ্যে জঙ্গিদের হামলায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী নিহত এবং সাত পুলিশ সদস্য আহত হন।

এরপর ১২ জুন রাজশাহীর তানোরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ১ জুলাই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ জুলাই রাতে সাভারের আশুলিয়ায় একটি বাড়িতে অভিযান শুরু হয়, পরদিন চার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে।

বিস্ফোরণে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে পড়ে। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে রাজধানীর পান্থপথের আবাসিক হোটেল ওলিওতে অভিযানে সাইফুল নামে এক জঙ্গি নিহত হয়। ঢাকার মিরপুরের দারুস সালামে এক বাড়িতে ৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে র‌্যাবের অভিযান শুরু হয়, শঙ্কা আর উদ্বেগে দিন পার হওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর রাতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে জঙ্গি আবদুল্লাহর স্ত্রী ও শিশুসন্তানসহ পরিবারের পাঁচজন এবং তার দুই কর্মচারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব। এরা সবাই আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যান।

এরপর ৫ অক্টোবর শেরপুর, ৯ অক্টোবর ও ২৩ অক্টোবর যশোর এবং ১৬ নভেম্বর নওগাঁয় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়।

আস্তানায় অভিযানের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধেও কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। বগুড়ার কাহালুতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মো. আবু মুসা, যিনি গুলশান হামলার সন্দেহভাজন জেএমবি নেতা ‘রাজীব গান্ধী’র সহযোগী বলে পুলিশের ভাষ্য।

মুসা কুষ্টিয়ার মজমপুর এলাকার বাউলভক্ত হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক মীর সানোয়ার রহমান এবং নাটোরের বনগ্রাম বাজারে খ্রিস্টান মুদি দোকানি সুনীল গোমেজ হত্যায় জড়িত ছিলেন বলেও কর্মকর্তারা জানান।

গত ২৫ অগাস্ট কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আসলাম আলী (৪২) নামে সন্দেহভাজন এক নব্য জেএমবি সদস্য নিহত হন। জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত একাধিক মামলা আসামি ছিলেন তিনি।

নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল  দাস ফিরে এসেছেন; ফেরেননি অনেকেই

রহস্যজনক অপহরণ

চলতি বছর ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ অনেকে নিখোঁজ হন। অধিকাংশ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়।

নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন ফিরে এলেও ‘অজ্ঞাতবাস’ সম্পর্কে কেউ স্পষ্ট কোনো তথ্য না দেওয়ায় এই রহস্যের জট খোলেনি। তবে সম্প্রতি পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জঙ্গি দমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বক্তব্যে বলেছেন, বিভিন্ন সময় তারা অনেককে ধরে নিলেও ‘তথ্য বের করানোর জন্য’ সব সময় তা প্রকাশ করতে পারেন না

নিখোঁজদের মধ্যে সাংবাদিক উৎপল দাস,নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার ও ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়সহ কয়েকজন পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন।

এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিদেশফেরত মেয়েকে আনতে ধানমণ্ডির বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন সাবেক কূটনীতিক এম মারুফ জামান।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৫৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যায় বলে পরিবারের অভিযোগ। এসব ব্যক্তির মধ্যে পরিবারের কাছে ফিরেছেন সাতজন, পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে পাঁচজনকে এবং লাশ উদ্ধার হয়েছে দুজনের।

একের পর এক নিখোঁজ এবং কয়েক মাস পর কারও কারও ফিরে আসার মধ্যে একদিন সকালে কলামনিস্ট ফরহাদ মজহারের অন্তর্ধান এবং গভীর রাতে যশোরে একটি বাস থেকে তাকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধার নতুন উত্তাপ ছড়ায়।

ডানপন্থি এই অধিকারকর্মী তাকে অপহরণ করা হয়েছিল দাবি করলেও পুলিশ বলছে, তিনি অপহৃত হননি, বের হয়েছিলেন এক শিষ্যের সঙ্গে দেখা করতে।

এই দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে অর্চনা রানী নামে এক নারীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে ওই ঘটনায় আদালতে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনেও ‘অপহরণ নাটক’ সাজানোর কথা বলা হয়েছে। এ ঘটনায় ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পুলিশ।

পুলিশের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের প্রথম নয় মাসে সারা দেশে ৩৯৭ জন অপহৃত হন। এদের মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর থেকে অপহরণ করা হয়েছে ৭৮ জনকে। অক্টোবর মাসের পর পুলিশ সদর দপ্তর মাসভিত্তিক এই তথ্য আর হালনাগাদ করেনি। 

সাফাত আহমেদ

ছেলের ধর্ষণকাণ্ডে ফেঁসেছেন ‘আপন’ মালিকরা

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। ঘটনার মাসখানেক পর তারা আদালতে মামলা করার পর ফেইসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

এরমধ্যে ছেলের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ। ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ তুলে তার বিচারের দাবি ওঠে।

ওই ঘটনায় সাফাত (২৬), আরেক ধর্ষক তার বন্ধু নাঈম আশরাফ (৩০), ধর্ষণে সহযোগিতাকারী সাদমান সাকিফ (২৪) এবং গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে আমদানির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৭ গ্রাম হীরা জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

বনানীতে অভিনেত্রী ধর্ষিত

রেইনট্রির ঘটনার রেশ না কাটতেই ৫ জুলাই বনানীর একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে এক অভিনেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিনের ছেলে বাহাউদ্দিন ইভানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এরপর গত ২০ নভেম্বর বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে অবস্থিত সুইট ড্রিম নামের একটি হোটেলে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ আসে। সংগীত শিল্পী  আনুশেহ আনাদিলের ভাই কুশান ওমর শাফির বিরুদ্ধে ওই নারী বনানী থানায় ১৩ ডিসেম্বর মামলা করেন।   

এছাড়া  রাজধানীর কদমতলীতে টেলিভিশনের এক উপস্থাপিকাকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে শরিফুল ইসলাম নান্টু নামে একজনের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা হয়।

রাজধানীর শাহবাগে শুক্রবার গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত গণসমাবেশে বনানীতে দুই ছাত্রীর ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক

টাঙ্গাইলে তরুণীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা

২৯ অগাষ্ট টাঙ্গাইলের মধুপুরে এক তরুণীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পরে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে চার দিন আগে চলন্ত বাসে দলবেঁধে ধর্ষণের পর ওই কলেজছাত্রীকে হত্যা করা হয়।

‘ছোঁয়া’ পরিবহনের একটি বাসে করে রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন জাকিয়া সুলতানা রূপা নামে ওই তরুণী।

ওই বাসের চালক, সুপারভাইজারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার পর  জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বিবরণ পায় পুলিশ।

নিহত জাকিয়া সুলতানা রূপার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে। ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে পড়ালেখা করার পাশাপাশি একটি কোম্পানির বিপণন বিভাগে কাজ করছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ জেলা সদরে।

চট্টগ্রামে এক পরিবারের চার নারীকে ধর্ষণ

গত ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহ মিরপুর গ্রামে প্রবাসী তিন ভাইয়ের বাড়িতে কয়েকজন যুবক গ্রিল কেটে ঢুকে তাদের স্ত্রী এবং এক বোনকে ধর্ষণ করে।

পুলিশের গড়িমসির প্রেক্ষাপটে একজন প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পাঁচ দিন পর ওই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। এরপর ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে এলে ধর্ষকদের বিচার দাবিতে রাজপথেও কর্মসূচি পালিত হয়।

এই বাড়ির পাঁচতলায় খুন হয় মা-ছেলে

আলোচিত হত্যাকাণ্ড

ঢাকার কাকরাইল ও বাড্ডায় এক দিনের ব্যবধানে মা-ছেলে এবং বাবা-মেয়ে হত্যাকাণ্ড আলোচিত হয়।

১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাকরাইলে রাজমনি প্রেক্ষাগৃহের পশ্চিম দিকের গলির একটি বাসায় গলাকেটে ও ছুরি মেরে খুন করা হয় শামসুন্নাহার ও তার ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওনকে।

এ ঘটনায় ওই বাড়ির কর্তা ব্যবসায়ী আব্দুল করিম, তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন নাহার মুক্তা ও তার ভাই আল আমিন জনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে দোষ স্বীকার করে জনি বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বে বোনের যন্ত্রণা দেখে সতীন ও তার ছেলেকে হত্যা করেন তিনি।

কাকরাইলের এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যে ২ নভেম্বর রাতে বাড্ডার হোসেন মার্কেটের পেছনে ময়নারবাগ এলাকায় নিহত হন জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে নুসরাত জাহান (৯)। জামিলকে মাথায় আঘাত করে আর নুসরাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জামিলের স্ত্রী আর্জিনা বেগম এবং তাদের ফ্ল্যাটের সাবলেট শাহীন মল্লিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরকীয়া সম্পর্কের জন্য আর্জিনার পরিকল্পনায় শাহীন প্রথমে জামিলকে হত্যা করেন এবং তা দেখে ফেলায় নুসরাতকে হত্যা করা হয় জানিয়ে তারা দুজনই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

পুলিশের ওয়েবসাইটের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের প্রথম নয় মাসে সারা দেশে দুই হাজার ৬৭৯টি হত্যাকাণ্ড থানায় রেকর্ড হয়েছে। সেপ্টেম্বরের পর এই তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি।

এই তালিকা অনুযায়ী জুন মাসে সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছে। এ মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪৭টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা রেঞ্জেই হয়েছে ২৯৮টি। আর ঢাকা মহানগরীতে এই নয় মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৬৬টি।

নারী শিশু নির্যাতন বেড়েছে

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছরের প্রথম নয় মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র বেশ উদ্বেগজনক।এই নয় মাসে ১৩ হাজার ১৩২টি  নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে মে মাসে।