বিশ্লেষকরা বলছেন, কে এম নূরুল হুদার এই নির্বাচন কমিশনকে ২০১৮ সালে অন্তত তিনটি চ্যালেঞ্জ পার হতে হবে।
২০১৭ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরের বাকিটা সময় ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি ও সংলাপেই কেটেছে ইসির। এই দশ মাসে কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন এবং সংলাপ করে আস্থা অর্জনের সূচনা করতে পেরেছে তারা।
আসছে জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন ও উত্তর-দক্ষিণের নতুন যোগ হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটের তফসিল হবে। এপ্রিলের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেরও সময় রয়েছে।
রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট রয়েছে বছরের মধ্যভাগে। ২০১৩ সালের ১৫ জুন চার সিটি ও ৬ জুলাই গাজীপুরে ভোট হয়। এবার মে মাসের মধ্যে এসব সিটি করপোরেশনে ভোট করতে হবে। তার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাইবান্ধায় মন্ত্রী ছায়েদুল হক ও সাংসদ গোলাম মোস্তফার শূন্য আসনে উপ নির্বাচন করতে হবে মার্চের আগেই।
২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে করতে হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। সেক্ষেত্রে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে ইসিকে।
অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিগত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় আগামী নির্বাচনে সব দলকে ভোটে আনাই বর্তমান কমিশনের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
ভোটার তালিকা হালনাগাদে এবার রেকর্ড সংখ্যক মৃতের নাম বাদ পড়ছে। ভোটার সংখ্যায় নারী-পুরুষের ব্যবধানও কমে এসেছে। একাদশ সংসদে ভোটার সংখ্যা দাঁড়াবে সব মিলিয়ে ১০ কোটি ৪৬ লাখের মতো।
স্মার্ট কার্ড বিতরণ নিয়ে নানা জটিলতার পর এ বছর নিজস্ব অর্থায়নে উৎপাদনে যায় ইসি। মহানগরের পর ১ ডিসেম্বর থেকে জেলা পর্যায়েও বিতরণ শুরু হয়েছে।
এ বছর বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহযোগিতায় ইসির নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রথম পরীক্ষা হয় ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে। ইসির দাবি, সেখানে তারা সফল হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো নারী সদস্য পেয়েছে কমিশন। স্বাধীনতার পর ইসির প্রথম নিজস্ব ভবন ‘নির্বাচন ভবনে’ নতুন কমিশনের যাত্রা শুরু হয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীমের মতে, অনেকগুলো কাজ নিয়ে ২০১৭ সাল ইসির জন্য ভালোই গেছে।
“সিটি ভোটের পর সংসদ নির্বাচনের বছর আসছে। ইসির সামনেও অনেক কাজ পড়ে রয়েছে। সেজন্য ২০১৮ সালই ইসির জন্যে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের সময়।”
আব্দুল আলীম বলেন, ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়ন ইসির সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকাসহ ছয় সিটি নির্বাচন শক্ত হাতে সামাল দিতে হবে। আর তৃতীয়ত সবাইকে ভোটে এনে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা।
“কমিশনকে চাপের মধ্যেই কাজ করতে হয়। আস্থার পরিবেশ ধরে রেখে সঠিকভাবে এগোলেই বিভিন্নমহলের চাপ থেকে বেরিয়ে আসবে কমিশন। আমার মনে হয়, ভোটের বছরেও সবাইকে নিয়ে কমিশন বেশ সফলই হবে।”
ভোটের সূচি ২০১৮
নির্বাচন | সর্বশেষ ভোট | মেয়াদ পূর্তির তারিখ | আগামী নির্বাচনের সময়সীমা |
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন | ফেব্রুয়ারিতে মেয়র পদে হবে উপ নির্বাচন | ১৪ মে, ২০২০ | ১ ডিসেম্বর ’১৭-২৮ ফেব্রুয়ারি ’১৮ |
গাজীপুর সিটি করপোরেশন | ৬ জুলাই ২০১৩ | ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৮ মার্চ-৪ সেপ্টেম্বর ’১৮ |
সিলেট সিটি করপোরেশন | ১৫ জুন ২০১৩ | ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৩ মার্চ-৮ সেপ্টেম্বর ’১৮ |
খুলনা সিটি করপোরেশন | ১৫ জুন ২০১৩ | ২৫ সেপ্টম্বর ২০১৮ | ৩০ মার্চ-২৫ সেপ্টেম্বর ’১৮ |
রাজশাহী সিটি করপোরেশন | ১৫ জুন ২০১৩ | ৫ অক্টোবর ২০১৮ | ৯ এপ্রিল-৫ অক্টোবর ’১৮ |
বরিশাল সিটি করপোরেশন | ১৫ জুন ২০১৩ | ২৩ অক্টোবর ২০১৮ | ২৭ এপ্রিল-২৩ অক্টোবর ’১৮ |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন | ২৪এপ্রিল ২০১৩ | ২৪ এপ্রিল ২০১৮ | ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিলের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে |
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন | ৫ জানুয়ারি ২০১৪ | ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ | ৩০ অক্টোবর ’১৮–২৮ জানুয়ারি ২০১৯ |
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে কমিশনে যোগ দেওয়ার পর সিইসি কে এম নূরুল হুদা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে আপসহীন ভূমিকা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন নির্বাচনতো বটেই, অন্য নির্বাচনও আমরা একেবারেই নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করব। জাতীয় নির্বাচনে যাতে মানুষের মধ্যে, ভোটারদের মধ্যে আমাদের প্রতি আস্থার অবস্থান সৃষ্টি হয়, আমরা সেজন্য অবশ্যই কাজ করে যাব এবং যাচ্ছি।”
নূরুল হুদা বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইসি জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বার্তা দিতে চায়। আর সেই বার্তা দেওয়ার কাজটি শুরু হয়ে গেছে।
“রংপুরের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে আগামী বছর স্থানীয় নির্বাচনগুলোও একই মডেলে করতে চাইবে কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ভোট কমিশনের কনফিডেন্স বাড়িয়েছে; সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আস্থাও তৈরি হয়েছে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ১৫ অক্টোবর জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলে সমালোচনার মুখে পড়েন সিইসি নূরুল হুদা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এর প্রতিক্রিয়া বলেন, এটা সিইসির কৌশল হতে পারে। তবে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, সিইসির ওপর ‘প্রধান বিচারপতির ভূত’ চেপেছে। আর কৃষকশ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী সংলাপ বর্জন করে সিইসির পদত্যাগ দাবি করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৮ অক্টোবর সংলাপে গেলে তাদেরও প্রশংসায় ভাসান সিইসি। সেখানে তিনি জিয়াকে নিয়ে প্রশংসার ব্যাখ্যা দেন বলে জানালেও এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করতে চাননি কাদের।
তবে ‘সফল’ সংলাপ শেষে ২৬ অক্টোবর আবারও সেই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন সিইসি। তবে এরপর আর আলোচনা বাড়েনি।
পুরনো খবর