লন্ডনে যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের আয়েশী জীবন

একাত্তরে বুদ্ধীজীবী হত্যায় নেতৃত্বদাতা, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন বেশ আয়েশেই রয়েছেন লন্ডনে। মিলিয়ন পাউন্ড দামের বাড়ি আর বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে ভালোই কাটছে তার জীবন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2017, 01:04 PM
Updated : 28 Dec 2017, 01:38 PM

সম্প্রতি দ্য সানের অনুসন্ধানে উত্তর লন্ডনের উপকণ্ঠ সাউথগেটে মুঈনুদ্দীনের বিলাসবহুল বাড়ির তথ্য বেরিয়ে আসে বলে ডেইলি মেইলের এক খবরে বলা হয়েছে।

একাত্তরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেওয়া চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যুক্তরাজ্যে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি এক সকালে সাউথগেটে মুঈনুদ্দীনের মিলিয়ন পাউন্ড দামের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন ডেইলি মেইলের সাংবাদিক। সেখানে বাড়ির দরজা সামান্য ফাঁক করে কথা বলেন এক নারী।

মুঈনুদ্দীনের বিষয়ে জানতে চাইলে আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী ওই নারী জানান, তিনি বাড়িতে নেই এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার ফেরার সম্ভাবনা নেই।

এটুকু বলেই ওই নারী দরজা বন্ধ করে দেন।   

১৯৩০ এর দশকে নির্মিত বিলাসবহুল বাড়ির প্রাঙ্গণে দামি বিএমডব্লিউ ফাইভ সিরিজের কালো রঙের এক গাড়ি দেখেছেন ডেইলি মেইলের সাংবাদিক। শুধু তাই নয়, সেখানে আরও অন্তত দুটি গাড়ি রাখার মতো জায়গাও রয়েছে।

মুঈনুদ্দীনের সঙ্গে একই রায়ে আরেক বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খানেরও সাজা হয়েছিল। আশরাফ রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। 

জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষক, ছয়জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যা করেন।

রায়ের পর এক সাক্ষাৎকারে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন দম্ভভরে বলেছিলেন, বিচারক ও তাদের চ্যালাচামুণ্ডারা নিজেরা উল্টো ঝুলে পড়লেও তাকে ঝোলাতে পারবে না।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা মুঈনুদ্দীনের বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ এবং সাজার বিষয়ে তার প্রতিবেশীরা কিছুই জানে না।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী দ্য সানকে বলেন, “তারা এখানে ১৮ বছর ধরে আছে। আমি তার যুদ্ধাপরাধ কিংবা ইন্টারপোলের পরোয়ানার বিষয়ে কিছুই জানি না।”

তবে মুঈনুদ্দীনের বাড়িতে কয়েকবার পুলিশ দেখার কথা জানিয়েছেন এক প্রতিবেশী।

মুঈনুদ্দীনের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে জানানো হলে ওই প্রতিবেশী অবাক হয়ে বলেন, “এমন কাউকে প্রতিবেশী হিসেবে দেখাটা দুঃখজনক। আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না, তার সঙ্গে কখনো কথাও হয়নি। তবে সে যে এখানে আছে সেটা পুলিশ এবং ইন্টারপোল জানে, কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কিছুই করেনি।”

বাংলাদেশে সাজা হলেও মুঈনুদ্দীনকে ফাঁসিতে ঝোলানোটা অসম্ভবই হবে বলে মেইলের খবরে বলা হয়েছে। কারণ ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধী বিনিময়ের কোনো চুক্তি নেই। তাছাড়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে তার নিজ দেশ ফেরত পাঠানো ব্রিটেনের নীতি বিরুদ্ধ।

ইন্টারপোলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকলেও আন্তর্জাতিক এই পুলিশি সংস্থাটি মুঈনুদ্দীনকে খুঁজতে জোর চেষ্টা চালায়নি বলে মনে করেন এক প্রতিবেশী।