ঘুষ খান ‘সহনশীল মাত্রায়’: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বিভিন্ন বিষয়ে যারা প্রতিবেদন দেন, সেই কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল মাত্রা’য় ঘুষ খেতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পরামর্শ দেওয়ার একটি ভিডিও নিয়ে চলছে আলোচনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2017, 04:18 PM
Updated : 25 Dec 2017, 11:47 AM

শিক্ষা ভবনে রোববার পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দুর্নীতির প্রসঙ্গে কথা বলেন।

ডিআইএ কর্মকর্তারাই দেশের ৩৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেন, যার উপর ভিত্তি করে নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।

ভিডিওতে নাহিদকে বলতে শোনা যায়, “স্কুলে খাম তৈরি করা থাকে, আপনার কাজ হল আপনি গেলেন, গেলে আপনার খামটা আপনার হাতে ধরাই দিলে আপনি খাইয়্যা-দাইয়্যা তারপরে আসার সময় চলে আসবেন। আইস্যা রিপোর্ট দেবেন ঠিক আছে।

“সব জায়গায় যে বলেছি অপচয়-দুর্নীতি আমরা কঠোর অবস্থান নেব এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স। এটা আমাদের বলতে হবে… কিন্তু আমি ইডির (ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট) সভায় বলছি, আপনারা দয়া করে ভালো কাজ করবেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়্যা খাবেন। অসহনীয় হয়ে বলা যায় আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অবাস্তবিক কথা হবে।”

বাংলাদেশ ঘুষের ব্যাপকতা কতটা প্রবল আকার ধারণ করছে তা নিয়েও কথা বলেন এক সময়ের বাম নেতা নাহিদ।

“নানা জায়গায় এ রকম হইছে, সব জায়গাতেই এ রকম হইছে। খালি যে অফিসার চোর, তা না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর। … এই জগতে এ রকমই চলে আসতেছে। সবাইকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।”

তবে বিভিন্ন কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার ফলে বর্তমান সরকার আমলে দুর্নীতি কমেছে বলে দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

এর আগে গত ২ অগাস্ট ডিআইএ’র অধীন ৩৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে গণশুনানির কার্যক্রম উদ্বোধন করতে গিয়ে কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়া নিয়ে হুঁশিয়ার করেছিলেন নাহিদ।  

সেদিন তিনি বলেছিলেন, “পরিদর্শনে গিয়ে কেউ কেউ টাকা চেয়েছে, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। … খাম রেডি হয়ে থাকে, অনেকে শুধু সেই খাম আনতে যায়, এখনও এটা হচ্ছে অস্বীকার করি না।

“যারা ঘুষ খান, ইজ্জত থাকতে চলে যান। যারা ভালো কাজ করবেন, তাদের পুরস্কার দেব।”

ওই দিন ডিআইএ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেছিলেন, “আপনারা (ডিআইএ) যাদের (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে) পাঠাচ্ছেন, তারা গিয়ে টাকা চাচ্ছেন।”

তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকগুলোও নিয়ম না মানায় ঘুষ দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওই দিন সচিব বলেছিলেন, “আইন সম্মতভাবে এক পয়সা দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। এরপরেও টাকা দেওয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে থাকে। পয়সা দিলেই এমপিও হয়ে যাবে, এখন কি আর সেই দিন আছে? এখন সব অটোমেশনে হয়।”

এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর রোববারের বক্তব্যের ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর রাতে মন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, “মন্ত্রীর খণ্ডিত বক্তব্য প্রচার হওয়ার বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।”
 
একজন কর্তকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে আগের মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেওয়ার পর শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ এবং ডিআইএ’র কী অবস্থা ছিল, তাই বক্তব্যে বর্ণনা করেছেন মন্ত্রী।
 
“এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমরা এর আগের মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল ও ডিআইএ কর্মকর্তাদের ঘুষ নেবেন না সে কথাটি বলতে পারতাম না, আমরা বলতাম ঘুষ খান কিন্তু সহনশীল মাত্রায়। এখন সেই অবস্থা পাল্টেছে, শিক্ষা প্রকৌশলের বদনাম অনেকটাই কমে গেছে। তবে ডিআইএ কর্মকর্তাদের নিয়ে বদনাম আছে।”
 
তিন মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুদকে খবর দিয়ে ডিআইএ’র একজন কর্মকর্তাকে ঘুষের টাকাসহ ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও মন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
 
এবিষয়ে কথা বলতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে মন্ত্রী নাহিদকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। পরে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।