মাদক ঠেকাতে ‘খেয়াল রাখবেন’ বদিসহ এমপিরা

মাদক পাচার ঠেকাতে সীমান্ত এলাকার সংসদ সদস্যদের নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2017, 11:24 AM
Updated : 22 May 2018, 12:07 PM

রোববার ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা ও সমাধানে করণীয় নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।

সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলার ৩৩ জন সংসদ সদস্য এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এর মধ্যে কক্সবাজার-৪ আসনের (টেকনাফ-উখিয়া) সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিও ছিলেন, যার বিরুদ্ধে মাদক পাচারে মদদদানের অভিযোগ খোদ সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

তবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বদি বরাবরই মাদক পাচারে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

সভার পর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এখন জানতে পারলাম, টেকনাফের বিভিন্ন পথ দিয়ে মাদক ঢুকে যাচ্ছে। সেপথ দিয়ে যাচ্ছে মাদক না ঢুকতে পারে, সে পরামর্শ সাংসদরা দিয়েছেন।”

“মাদক সীমান্ত পথ দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে এদেশে ঢুকে যায়। সেজন্য সীমান্তবর্তী সংসদ সদস্যদের কাছে আমরা তাদের পরামর্শ চেয়েছি। তাদের পরামর্শ আমরা গ্রহণ করেছি।

“কোন পথ দিয়ে কীভাবে আসে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে (এমপি) তা খেয়াল রাখতে বলেছি।”

এক সাংবাদিক তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, “অনেক এলাকায়, আমি নাম বলতে চাই না, সরাসরি সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা মাদকের পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না “

উত্তরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “আমরা সবসময় আপনাদের জানিয়ে আসছি, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সে পুলিশ সদস্য হোক, র‌্যাব সদস্য হোক, মাননীয় জনপ্রতিনিধি হোক, আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) সব জানেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।”

সভায় আব্দুর রহমান বদি (সবার বামে)

“আমরা সব সময় বলে থাকি যে দুই-একটা ভুলভ্রান্তি অনেকে করতেই পারে এবং অনেকে লাইন ছাড়া …. এগুলোর সংখ্যা খুব বেশি নয়। এগুলো দু-একটি করে, তার উপযুক্ত বিচার এবং তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়,” যোগ করেন তিনি।

মাদক পাচারের জন্য পুলিশ ও বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনীর সমম্বয়হীনতাকেও দায়ী করা হয়। সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও এমন অভিযোগ এসেছে।

এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা (এমপি) চরম শব্দটি ব্যবহার করেননি। তারা বলেছেন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ-র‌্যাব এদের সমম্বয় থাকা উচিৎ। সমম্বয় যাতে থাকে, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।”

বাহিনীগুলোর কাজে সমম্বয়হীতার অভিযোগটি পুরোপুরি মেনে নিচ্ছেন না মন্ত্রী।

“সমন্বয় আছে। যেসব জায়গায় নাই, তা আমরা নোট করছি এবং সমম্বয় যাতে থাকে সে ব্যবস্থা করছি।”

মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু ‘ফাঁক-ফোঁকর’ বন্ধ করতে আইনটি যুগোপযোগী করা হচ্ছে বলেও জানান আসাদুজ্জামান কামাল।

সীমান্তে চোরাচালান বন্ধেও সংসদ সদস্যদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভারত সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সাল পর থেকে সীমান্ত হত্যা ক্রমাগত কমছে। ওই বছর (২০০৮) সীমান্তে ৬৮ জন নিহত হয়েছিল, এ বছর (২০১৭) ২১ জনে নেমে এসেছে।

“এটাই পরিষ্কার বোঝায় যে দুই দেশের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা মনে করি, এ সংখ্যা আরও কমে যাবে।”

এই সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, বিজিবির প্রধান, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।