সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2017, 07:33 PM
Updated : 24 Dec 2017, 04:00 PM

এ লক্ষ্যে পাঁচ বছরে সারা দেশে নতুন করে যেসব প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিয়োজন-সংকোচন হয়েছে সে সংক্রান্ত নথিপত্র জেলা প্রশাসন থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এসব তথ্য চেয়ে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) আবুল কাসেম গত সোমবার ৬৪ জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছেন।

আগামী বছরের শেষদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য গত ১৬ জুলাই একটি কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন।

সে অনুযায়ী চলতি ডিসেম্বরে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে ওই পরিকল্পনা মতো কাজ না হওয়ায় এখন বিদ্যমান আইনের আওতায় সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ লক্ষ্যে সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরো, এলজিইডি ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।

জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন আইন হোক বা বিদ্যমান অধ্যাদেশ হোক-আমাদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য দুটো বিষয় মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

“নতুন আইনের জন্য বসে থাকলাম, কিন্তু তা অনুমোদন হল না বা বিলম্ব হল, তাতে তো কাজ থেমে থাকবে না। তাই বিদ্যমান অধ্যাদেশে করতে গেলেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে যা যা দরকার হবে দ্রুত কাজ করার প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।”

ইসি সচিবালয় কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অন্তত ছয় মাস আগেই সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশ করতে হয়। নতুন আইনের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকলে এটা করা সম্ভব হবে না। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম গেল সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, “আইনটা হতে অনেক সময় লাগবে। সীমানা নির্ধারণের একটা নির্ধারিত সময় আছে। খসড়াটাই আমরা এখন পর্যন্ত করতে পারিনি। সুতরাং আমি এখনি বলতে পারছি না যে, নতুন আইনে হবে। অর্ডিন্যান্স যেটা আছে, হয়ত আমাদের এক্সিস্টিং য়ের ওপরই ডিপেন্ড করতে হবে।

১৯৭৬ সালের সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশের আলোকেই সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের ওই কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কনস্টিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স ১৯৭৬’ রহিত করে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

রোডম্যাপে ২০১৭ সালেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্য ছিল-

জুলাই-অগাস্ট: সীমানা নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রস্তত

অগাস্ট: জিআইএস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত

অক্টোবর: বিশেষজ্ঞের সহায়তায় ৩০০ আসনের সীমানা খসড়া তালিকা প্রণয়ন

নভেম্বর: দাবি-আপত্তি-নিষ্পত্তির সুপারিশ আহ্বান

ডিসেম্বর: সীমানার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ

তবে ওই রোডম্যাপ ধরে কাজ না এগোনোয় বিদ্যমান অধ্যাদেশকে আমলে নিয়ে এখন ২০১৩ সালের জেলা আসন অপরিবর্তিত রেখেই নীতিমালা করার প্রস্তুতি চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ এগিয়ে নিতে জেলা প্রশাসকদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

ডিসিদের কাছে পাঠানো ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য তথ্যাদি’ পাঠানো সংক্রান্ত ওই চিঠিতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনে সীমানা নির্ধারণের জন্য সর্বশেষ ৩ জুলাই ২০১৩ সালে প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার সীমনা নির্ধারণের গেজেটের পর যে সমস্ত  প্রশাসনিক এলাকা সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচন করা হয়েছে তার তথ্যাদি প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রামাণিক দলিলসহ জরুরি ভিত্তিতে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

৫০-৬০ আসনে পরিবর্তনের সম্ভাবনা

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ বছরে নতুন উপজেলা, পৌরসভাসহ সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদে কিছু প্রশাসনিক এলাকা যুক্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও ভাঙনও হয়েছে। আবার ছিটমহল বিলুপ্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংসদীয় আসনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

ইসির সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে সংসদীয় আসনের ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছি না। কিছু এলাকায় ছোটোখাটো পরিবর্তন আসবে। নতুন আদমশুমারি প্রতিবেদনও নেই। তাই আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে নতুন এলাকাগুলোকে যুক্ত করে হয়ত ৫০-৬০টি  সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস করতে হবে।”

এবারের প্রস্তাবিত নীতিমালা

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১৩ সালের সীমানার পর বিলুপ্ত ছিটমহলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, নতুন প্রশাসনিক ইউনিট সৃষ্টি-সম্প্রসারণ, নদী ভাঙনে প্রশাসনিক ইউনিট বিলুপ্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং প্রশাসনিক ইউনিটের যথাসম্ভব অখণ্ডতা বজায় রেখে ভোটার ও জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব সমতা বিধান।

এতে পাঁচটি প্রস্তাব করা হয়েছে- ২০১১ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদন মেনে ২০১৩ সালের নির্ধারিত জেলাভিত্তিক মোট আসন অপরিবর্তিত রাখা, সংসদীয় আসন জেলাভিত্তিক বণ্টন ও এক জেলার আসনের এলাকা অন্য জেলায় সম্প্রসারণ না করা, যেখানে সম্ভব উপজেলা, পৌর ও সিটি অবিভাজিত রাখা এবং ভৌগোলিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা।