দিয়াজের তৃতীয় ময়না তদন্ত চাইবেন আসামিরা

ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশের প্রথম ময়না তদন্তে আত্মহত্যা বলার পর তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তার মা; ফলে হয়েছিল দ্বিতীয় ময়না তদন্ত, যাতে হত্যার আলামত পাওয়ার কথা আসে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2017, 01:01 PM
Updated : 17 Dec 2017, 01:22 PM

এখন দ্বিতীয় ময়না তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে তৃতীয় বার ময়না তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন দিয়াজের মায়ের করা হত্যামামলার আসামিরা।

এই আলমগীর টিপু রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তৃতীয় ময়নাতদন্তের জন্য আমরা আবেদন করব।”

উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন জানিয়ে এই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়রা আহ্বান জানান তিনি।

দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় নিজের দায় অস্বীকার করে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবিও জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য বাতিল হওয়া কমিটির সভাপতি টিপু।

মামলা প্রত্যাহার না করলে ক্যাম্পাসে ধর্মঘটেরও হুমকি দেন দিয়াজ হত্যা ও সিআরবি’র জোড়া খুনের মামলার অন্যতম আসামি টিপু।

দিয়াজ ছিলেন ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক; কেন্দ্রীয় কমিটিরও সহ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে টিপু ও দিয়াজ দুজনই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ।

দিয়াজ ইরফান চৌধুরী

তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে শুরু থেকেই দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করে আসছিল।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে করেন হত্যামামলা।

তাতে বিশ্ববিদ্যালয় টিপুসহ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। আসামি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকেও।

দিয়াজের মায়ের আপত্তিতে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে। দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। গত ৩০ জুলাই দেওয়া প্রতিবেদনে তারা বলেন, দিয়াজের শরীরে হত্যার আলামত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিপু বলেন, আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিলেও এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ খুঁজে পায়নি। আদালতে ‘মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে দিয়াজের পরিবার মামলা করেছে।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে রোববার সংবাদ সম্মেলনে দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যামামলার আসামিরা

প্রথম ময়না তদন্ত প্রতিবেদনকে সঠিক দাবি করে দ্বিতীয় ময়না তদন্তকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেন তিনি।

এর আগে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অন্য চার ছাত্রলীগ নেতাকে দিয়াজের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিলেন টিপু।

রোববার বিকালে দ্বিতীয় বারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের যোগ্য অনুসারীদের মামলায় জড়িয়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় করতে এবং মনোবল ভেঙে দিতে ‘নীল নকশার অংশ’ হিসেবে এ মামলা করা হয়েছে।
মামলায় সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকে আসামি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন টিপু।  

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিপু বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছেন।

মামলা প্রত্যাহারসহ তিনটি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দিয়াজের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন না হলে ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে দিয়াজ হত্যা মামলার আসামি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ ও সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন ছাড়া অন্য আসামিরা উপস্থিত ছিলেন।

তারা হলেন রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমান।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর