তৃতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে অনুপস্থিত বাচ্চু চাইলেন এক মাস সময়

দুর্নীতি দমন কমিশনে দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়ে তৃতীয় দিন অনুপস্থিত ছিলেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2017, 12:21 PM
Updated : 17 Dec 2017, 12:21 PM

রোববার দুদকে না গিয়ে তিনি পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক মাস সময় চেয়ে আবেদন পাঠিয়েছেন।

সময়ের আবেদনে তিনি অসুস্থতাকে কারণ দেখিয়েছেন বলে কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদকের তলবে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম হাজির হন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি বাচ্চু। একদিন বিরতি দিয়ে ৬ ডিসেম্বর প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন তিনি।

তৃতীয় দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১৭ ডিসেম্বর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। 

বাচ্চুর চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রনব ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি (বাচ্চু) আবেদনে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।”

বাচ্চুর আবেদন নিয়ে কমিশন থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঋণে অনিয়মের ঘটনায় নিজেকে তিনি দোষী মনে করেন না।

জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে দুদক কার্যালয়ে আব্দুল হাই বাচ্চু (ফাইল ছবি)

বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে চাপের মুখে বাচ্চু পদত্যাগ করেন।

বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংটির ঋণ বিতরণে অনিয়মের ঘটনাগুলো ঘটে, পরে দুদক ৫৬টি মামলা করে।

দুই দিনে ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টির বিষয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

বাচ্চুকে আসামি না করেই মামলা দায়েরের পর সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে। সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক।

২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক।

ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধি বহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় গত বছর রাজাধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত।

বাচ্চুকে আসামি না করার বিষয়ে দুদক তখন যুক্তি দেখিয়েছিল, এই অনিয়মে তার সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি।

এরপর সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ছিল।

গত অগাস্টে এক মামলার শুনানিতে আপিল বিভাগ বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের অন্য কাউকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করে।

ব্যক্তি যেই হোক না কেন- এ ধরনের মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ যেন না হয় সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সে সময় সতর্ক করে আদালত।