প্রশ্ন ফাঁস: নাহিদের কণ্ঠে অসহায়ত্ব

প্রশ্ন ফাঁস বন্ধের সব উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আবারও বললেন, কিছু শিক্ষকের কারণেই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2017, 10:34 AM
Updated : 17 Dec 2017, 10:52 AM

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে রোববার সচিবালয়ে দুদকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আমাদের কাছে বহু পরামর্শ আসছে। এর মধ্যে পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করার পর প্রশ্নপত্র পাঠানোর বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে।

“তবে শিক্ষকই যখন প্রশ্ন ফাঁসকারী, তখন আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্ন পাঠিয়ে কী লাভ?”

তবে শিক্ষকদের হাত দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, দোষীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে কি না- এসব বিষয়ে কিছু বলেননি মন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস রোধের বিভিন্ন উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষকের হাতে প্রশ্ন তুলে দিয়ে রাতে ‘নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যাওয়া উচিত’।

“কিন্তু সেটা হচ্ছে না, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কিছু শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছেন।”

গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর সংবাদ মাধ্যমে এলেও এবার এর ব্যাপকতা পৌঁছেছে প্রাথমিক স্তরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগের পরও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জেএসসি এবং পঞ্চমের পিইসিতে অনেক বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই চলে এসেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

জেএসসিতে বিজ্ঞান পরীক্ষার আগে শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন পাওয়ার পর উত্তর হাতে লিখে নিচ্ছে পরীক্ষার্থী (ফাইল ছবি)

প্রাথমিক সমাপনীর শেষ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নও পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছে একটি ফেইসবুক পেইজে।

শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁসের জন্য শিক্ষকদের দুষলেও দুদকের ‘শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিমের’ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ সরকারি প্রেস (বিজি প্রেস), ট্রেজারি ও পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের ‘অসাধু’ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও বিভিন্ন অপরাধী চক্রও যুক্ত থাকতে পারেন বলে দুদকের তদন্তকারীদের ধারণা।

প্রশ্ন ফাঁস, নোট-গাইড, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে ৩৯ দফা সুপারিশসহ ওই প্রতিবেদন গত ১৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক  বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে পাঠানো হয়।

দুদক কমিশনার নাসির উদ্দিন আহমেদ রোববার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ওই প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন।

বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষকদের লোভ দেখায়, যে কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে তাদের শিক্ষার্থীদের ভালো ফল করাতে পাড়লে কোচিং ব্যবসা ভালো হবে। টাকা আয়ের পরিমাণটাও বাড়বে। এসব লোভের কারণে শিক্ষকরাই কোচিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে।”

মন্ত্রী বলেন, কিছু শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে বাড়িতে বা কোচিংয়ে পড়ান। যত নামি শিক্ষক, ক্লাসে ‘তত কম’ পড়ান; কারণ ক্লাসে ভালো পড়ালে তার ‘ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে’।

আইন না থাকায় সরকার এখন কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। শিক্ষা আইন পাস হলে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।