সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এই আয়োজনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিজয়ের ৪৬ বছর উদযাপিত হয়।
‘বিজয় পতাকা হাতে চলি অবিরাম’ শিরোনামে বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যনে বিজয় উৎসবে অংশ নেন অগুনতি মানুষ।
বিজয় উৎসবের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে।দেশাত্মবোধক গান আর তার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনায় ছিল স্বদেশের বন্দনা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনার মাঝে উপস্থাপক রোকেয়া প্রাচী তুলে ধরেন সম্প্রতি বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপাওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বিশ্ব নেতাদের মূল্যায়ন।
ত্রিপুরা ভাষায় দেশাত্মবোধক গান শোনান পায়েল ত্রিপুরা। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ গানটি গেয়ে শোনান হৈমন্তী রক্ষিত। শত কণ্ঠে দেশের গান শোনান শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা।
রাত পর্যন্ত চলা এই উৎসবে দর্শক-শ্রোতার মন রাঙিয়েছেন লোকগানের শিল্পী মমতাজ। শ্রোতাদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে ব্যান্ডদল দলছুট ও সোলস।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ এবং ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীদের গানের পাশাপাশি পরিবেশিত হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীদের ময়ূর ও ওয়াংগালা নাচ। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন সামিনা হোসেন প্রেমা ও অনিক বোসের দল।
হাজারো কণ্ঠে সোনার বাংলা
সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকালে হাজারোও কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়।
বিকাল পৌনে ৪টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাঠ ও গ্যালারির পাঁচ হাজার দর্শক সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত গান। এরপর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ধনধান্য পুষ্পভরা গানের সাথে সমবেত নৃত্যগীত পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা।
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান সৈয়দ হাসান ইমাম। রবীন্দ্রনাথের ‘একবার তোরা মা বলে ডাক’ গানটি গেয়ে শোনান লাইসা আহমেদ লিসা। ফারহানা আক্তার শ্যার্লি ও বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী দ্বৈতভাবে পরিবেশন করেন জয়দেব সেনের ‘এই বাংলার মাটিতে’ গানটি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সপ্তম ও শেষ দিন শনিবার সকালে ভাস্কর্য অঙ্গনে ছিল শিশু-কিশোর আনন্দ অনুষ্ঠান।
এতে অংশগ্রহণ করে সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব অটিস্টিক, চিলড্রেন, কল্পরেখা, খেলাঘর, মৈত্রী শিশু দল, নৃত্যজন, বধ্যভূমির সন্তানদল, ইউসেপ স্কুল ও আলোর ধারা স্কুল।
বিকাল ৩টায় উন্মুক্ত মঞ্চে পথনাটক ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম ’ পরিবেশন করে থিয়েটার আর্ট ইউনিট। পরে প্রধান মিলনায়তনে নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ, সংগীত পরিবেশন করেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, দলীয় সংগীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে উদয়ন একাডেমি।
সন্ধ্যা ৭টায় ভাস্কর্য অঙ্গনে ‘কবিগান’ পরিবেশন করে বাগেরহাটের মিরা সরকার, যশোরের প্রীতিশ সরকার ও তাদের দল।
বিকালে মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রাঙ্গনেও ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন। সেখানে মিরপুরের ১০টি সংগঠনের সদস্যরা গান, কবিতা ও নাটক পরিবেশন করে। এগুলো হল-চারুলতা একাডেমি, যুব বান্ধব কেন্দ্র, সপ্তসুর সঙ্গীত একাডেমি, গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বধ্যভূমির সন্তানদল, কালের উচ্চারণ, মিরপুর উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নূপুর কালচারাল একাডেমি ও মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য ফোরামের শিল্পীরা।
শিল্পকলা একাডেমি
আলোচনা শেষে হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সমবেত নৃত্যের পর দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলার মুখ ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের করে সংস্কৃতিকর্মীরা।শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর ঘুরে টিএসসি গিয়ে শেষ হয়।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু এখনও মুক্ত হতে পারিনি।
“সাম্প্রদায়িকতা, পরাধীনতা ও নানা বৈষম্য থেকে আমরা এখনও মুক্ত হতে পারিনি। এই অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করতে পারলে আমরা মুক্ত হতে পারব।”
সভাপতির বক্তব্যে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের শপথ গ্রহণ করতে হবে।
“আমরা বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গিবাদকে উৎখাত করতে চাই। মক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”