বিজয়ী জাতি, চলব মাথা উঁচু করে: হাসিনা

বিজয় দিবসে কারও কাছে নত না হয়ে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকরয়টার্স
Published : 16 Dec 2017, 03:28 PM
Updated : 16 Dec 2017, 06:08 PM

বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকীতে শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিজয়ী জাতি, সে কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে। এক মুহূর্তের জন্য ভুললে চলবে না যে, আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা কারও কাছে মাথা নত করি না। আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে মর্যাদার সাথে চলব। এটাই হবে আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।”

অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম হয়েছিল, সেই চেতনায় নিজেদের গড়ে তুলতে তরুণ-যুবকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের যারা যুব সমাজ আছে তাদের আমি এইটুকুই বলব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, লাখো শহীদের যে ত্যাগ, সেই ত্যাগের মহিমায় নিজেদের গড়ে তুলতে হবে উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে।

“গড়ে তুলতে হবে বাংলাদেশকে।”

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই বিজয় উৎসবের উদ্বোধনে তিনি বলেন, “যুগ যুগ যেন এই আনন্দ উৎসব বাংলার মানুষ পালন করে যেতে পারে, সেটাই আমার কামনা।”

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের অভ্যন্তরে যারা গেরিলা যোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমি ঘৃণা জানাই, যারা সেদিন ওই হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের মা-বোনদের তুলে দিয়েছিল ওই হানাদার বাহিনীর হাতে, দিনের পর দিন যারা পাশবিক অত্যাচারে নির্যাতিত হয়েছিল।

“আমি ঘৃণা জানাই যারা আল-বদর বাহিনী, রাজাকার বাহিনী, আল-শামস বাহিনী গড়ে তুলে মুক্তিকামী মানুষের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল,অগ্নিসংযোগ করেছিল, লুটপাট করেছিল, এদেশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।তারা পরাজিত হয়েছিল, বিজয়ী হয়েছিল বাংলার মানুষ।”

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজেদের বন্দিদশার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করার পর আমার মা, আমি, ছোট বোন রেহানা, ছোট ভাই রাসেল, জামালসহ আমাদেরও কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের বাসায় বন্দি করে রাখে।”

বড় ভাই শেখ কামাল ২৬ মার্চ রাতেই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। আর মেঝো ভাই শেখ জামাল বন্দিদশা থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণে বাংলাদেশজুড়ে যখন উল্লাস, সে সময়ও মা ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্দি অবস্থায় ছিলেন শেখ হাসিনা।

সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করেছে, সমগ্র ঢাকা শহর চারদিকে জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত। আমরা ১৮ নম্বর রোডের বাসায় বন্দি কয়েকটি মানুষ।

“রাসেল, রেহানা, আমি আর আমার মা ওই বন্দিখানায়। চারদিকে জয় বাংলার স্লোগান। বাংলাদেশ মুক্ত। আমরা কয়েকজন রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ। বাইরে থেকে জয় বাংলা স্লোগান আসে, আমরা ভেতরে বসে ওই জয় বাংলা স্লোগানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলাই, ওই বন্দিখানায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপস্থিতিতেই। আমরা সেদিন মুক্তি পাইনি। মুক্তি পেয়েছি তার পরদিন, ১৭ ডিসেম্বর।”

উৎসবের শুরুতেই ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি গান শিল্পকলা একডেমির শিল্পীরা।

পরে মেহেন্দীগঞ্জের এক মুক্তিযোদ্ধা ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন।

এরপর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গৃহিনী ফারজানা আলী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর দেওয়ার এবং শিক্ষার্থী মাইশা ও ইয়াফেস শাহীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।