শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কথা ‘জানছে না’ তরুণ প্রজন্ম

মুক্তিযুদ্ধে জাতির মেধাবী সন্তানদের আত্মদানের কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এসেছে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2017, 03:43 PM
Updated : 14 Dec 2017, 05:52 PM

বৃহস্পতিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিন শহীদের পরিবারের সদস্য এই অভিযোগ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বেছে বেছে বিভিন্ন অঙ্গনের নেতৃস্থানীয় বাঙালিদের ধরে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা।

প্রতিবছরের মতো বৃহস্পতিবারও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে জাতি।

বুদ্ধিজীবী দিবসে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় সন্ধ্যার এই আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।

রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানাতে ছিলেন স্কুলছাত্ররা

শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী বলেন, “এখন আমাদের দুঃখ হল, আমরা যে দেশটা চেয়েছিলাম একাত্তরে, সে দেশটা আমরা পাইনি।

“এ দেশের জন্য যারা আত্মত্যাগ করে গেল, সেই শহীদদের আদর্শ, ঐতিহ্যের কথা আজ কেউ জানে না। এটা তো জাতিরই ক্ষতি হল।”

পঁচাত্তরে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে তোষণ করে ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দিয়ে দেশকে ’৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজা নূর ক্ষুব্ধ হয়েই বলেন, “জনগণের কথা ভেবে তারা সেদিন যে আত্মদান করে গিয়েছিলেন, তাদের তো ফিলোসফি ছিল।

“আজকের দিনে সে ব্যাটনটা যারা প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে যাবে, তাদের জন্য কি পরিবেশ নির্মাণ করতে পেরেছে আজকের বাংলাদেশ?”

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে শহীদ সন্তানদের লালন-পালন করতে শহীদ জায়াদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারিভাবে একটি বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মরণে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা

শহীদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর বলেন, “একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কাজ, জীবন সম্পর্কে জানেন, এমন অনেক চাক্ষুস সাক্ষী রয়েছেন। তাদের নিয়ে কিন্তু আমরা বড় পরিসরে আয়োজন করতে পারি, যেন তরুণরা সেই ইতিহাস জানতে পারে।”

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “একাত্তরের এই বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাস তুলে ধরতে হলে তরুণ প্রজন্মকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আলোচনার পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় সংগীত ও আবৃত্তি হয়।