নৈতিকতার ঘাটতি, শাস্তি না হওয়া অনিয়ম বাড়াচ্ছে ব্যাংকে: গবেষণা

নৈতিকতার ঘাটতির পাশাপাশি অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার উদাহরণে ব্যাংক খাতে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বাড়ছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2017, 01:50 PM
Updated : 14 Dec 2017, 02:28 PM

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের চালানো এই গবেষণায় অনিয়মের জন্য আরও কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘কর্পোরেট  ইথিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইন ব্যাংকস : বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক কর্মশালায় এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

২০০ জন ব্যাংকারের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি  এই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতার ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ক্রমান্বয়েই বাড়ছে।

অনিয়ম করলেও শাস্তি না হওয়াকে আর্থিক অনিয়মের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব, নৈতিকতা বিষয়ে উৎসাহ প্রদানের অভাব এবং ব্যাংকারদের অল্প বেতন-ভাতা।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে অনিয়মের কয়েকটি বড় ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিআইবিএম এই গবেষণা চালায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

বিআইবিএম মিলনায়তনে কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান

রাজী হাসান বলেন, “ব্যাংক ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে আস্থার উপর নির্ভরশীল। আমানতকারীদের আস্থার সঙ্কট হলে ব্যাংকিং ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।“

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি ব্যাংক আমানতকারীদের আস্থার সঙ্কটের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ডেপুটি গভর্নর বলেন, “আমদানি-রপ্তানিভিত্তিক অর্থ পাচারের অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রেই এই অভিযোগটা সবচেয়ে বেশি।

তবে অর্থ পাচার নিয়ে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তার অনেকাংশেই সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, “সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে পরিমাণ অর্থ রাখার কথা বলা হয়, তার পরিমাণ অত বেশি হবে না।”

বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক চৌধুরী বলেন, “বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানকার বোর্ড সুশাসন বাস্তবায়নের পরিবর্তে ঋণ অনুমোদন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকের বোর্ডের মূল কাজ হল নীতি প্রণয়ন এবং নজরদারি করা। কিন্তু বাংলাদেশে সুশাসনের সংস্কৃতির প্রচলন নেই।”

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় সমাজের সবখানেই দেখা দিয়েছে।

“দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে ব্যাংকের উপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। ব্যাংকের উপর মানুষ এখন আর ভরসা করতে পারছে না। এর উন্নতি করতে হবে।”

মানুষের কষ্টের কথা শোনার জন্য আর্থিক ন্যায়পাল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।