‘একাত্তরের পরেও থেমে নেই বুদ্ধিজীবী হত্যা’

বাংলাদেশকে মেধা শূন্য করার পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধির চর্চা আটকাতেই একাত্তরে সাম্প্রদায়িক শক্তি বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল বলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনায় বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2017, 11:33 AM
Updated : 14 Dec 2017, 11:48 AM

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে টার্গেট কিলিংয়ে লেখক-অধ্যাপকসহ মুন্তমনাদের হত্যার প্রসঙ্গে টেনে তারা বলছেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চা আটকাতে একাত্তরের পরেও থেমে নেই বুদ্ধিজীবী হত্যা।

বৃহস্পতিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মুক্তমনাদের ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ মতো পাকিস্তানের তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাও ফরমান আলী বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের আল-বদর ও আল-শামসের মাধ্যমে ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আলোচনায় বলছেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

বাংলাদেশে বর্তমান জঙ্গিবাদের আনুষ্ঠানিক ভিত ১৯৭১ সালেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা যে জঙ্গিবাদের কথা বলি সে জঙ্গিবাদকেও হার মানিয়ে দিয়েছিল ওই বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ।”

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পেছনে ‘একটি উদারনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক গুণাবলী’র চেতনা কাজ করেছিল মন্তব্য করে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “এটির পেছনে ছিলেন বুদ্ধিজীবীরা। এই চেতনার উদ্রেককারী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠ সখ্যাতা থাকার কারণে তাদেরকে পাকিস্তানিরা হত্যা করে।”

একাত্তরের পরেও ‘বুদ্ধিজীবী হত্যা’ থেমে নেই মন্তব্য করে অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের উপর আক্রমণ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিমের হত্যাসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মুক্তমনাদের কুপিয়ে হত্যার প্রসঙ্গ টানেন বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, “যারা সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করে, যারা ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করে- তারা সহ্য করতে পারেনা যে এদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হোক।”

আলোচনায়  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনই একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি সবসময় সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

“সুতরাং পাকিস্তানি জান্তা যখন তার ছোবল হেনেছিল, তখন প্রথমেই হেনেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ রাতে এবং এর শেষটিও এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বরে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাদের হারিয়েছে তাদের মত ‘পণ্ডিত’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কেউ হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা যে পঙ্গু করতে চেয়েছিল, মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল; তারা অনেকখানি সফল হয়েছেও। কারণ আমরা এখনো কিন্তু ঠিক যাদেরকে হারিয়েছি, তাদের মাপের ব্যক্তিত্ব, পাণ্ডিত্য বা সমমর্যাদার কাউকে পাইনি।”

ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তানিরা যখন বুঝতে পারল পরাজয় নিশ্চিত, তখন পূর্বের তালিকানুযায়ী ‘আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী, যারা তখনো বেঁচে ছিলেন তাদের ধরে ধরে’ হত্যা করেছে।

বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেন চলমান থাকে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনা সভার শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। সভার সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার এনামউজ্জামান।

এতে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বক্তব্য রাখেন।