ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যে প্রেসে ছাপানো হয়েছিল খান বাহাদুর সেখানকার কর্মচারী।
বুধবার রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “তাকে (খান বাহাদুর) গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে এই চক্রের মূলোৎপাটন করা হয়েছে।”
এই চক্রের ‘শীর্ষে’ থাকা পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ইসামীও পুলিশের হেফাজতে আছেন উল্লেখ করে নজরুল জানান, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গত তিন মাসে এই পর্যন্ত মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগেরদিন রাতেই প্রশ্নের ইংরেজি অংশটি ফাঁস হওয়ার খবর আসে গণমাধ্যমে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সিআইডি জানায়, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস করা হয়েছে।
প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তাদের কাছ থেকে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করেন, যা দিয়ে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
ওই দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ১৩ জনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের কাছেও বাইরে যোগাযোগ করার বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী ওই সময় জানিয়েছিলেন, মাস্টারকার্ডের মত দেখতে পাতলা ওই ডিভাইসের ভেতরে মোবাইল সিম থাকে। আর পরীক্ষার হলে ব্যবহারের জন্য থাকে অতি ক্ষুদ্র লিসেনিং কিট। এই ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে হলের ভেতরে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর বলে দেওয়া যায়।
পরে আটকদের মধ্যে থেকে ১২ শিক্ষার্থীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাসের সাজা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে মহিউদ্দিন রানা ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১ থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক হোসেন রাফি, ফারজাদ সোবাহান নাফি এবং এই চক্রের অন্যতম হোতা আনিন চৌধুরীকে।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, “এই তিনজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৪ নভেম্বর রংপুর থেকে নাভিদ আনজুম তনয় এবং গাজীপুর থেকে এনামুল হক আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের কাছ থেকে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে।”
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, “এদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি এদের মধ্যে শুধু ডিভাইস সাপ্লাই গ্রুপই নয়, প্রশ্ন ফাঁসের গ্রুপও জড়িত।”
এরপর ৭-৯ ডিসেম্বরে ঢাকার জিগাতলা থেকে নাজমুল হাসান নাঈম (১৯), রাজশাহী মেডিকেল এলাকা থেকে বনি ইসরাইল (২৩) এবং রাজশাহীর বিনোদপুর এলাকা থেকে মারুফ হোসেনকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার নজরুল জানান, বনি ইসরায়েল এবং মারুফ হোসেনের কাজ ছিল ভর্তিচ্ছু ছাত্র সংগ্রহ এবং তাদের তথ্য চক্রের নেতা রকিবুল হাসান ইসামীকে সরবরাহ করা।
তিনি বলেন, “গত ১১ ডিসেম্বর ইসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল (বুধবার) জামালপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, খান বাহাদুর একটি প্রেসের কর্মচারী যেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ছাপানো হত।
“খান বাহাদুরের সঙ্গে পরিচয় ছিল সাইফুলের। সাইফুল একসময় ইসামীর কাছে প্রশ্নের বিষয়টি তুললে ইসামী তার গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং সাইফুলকে বলে প্রশ্ন ছাপানো হলে তা দ্রুত সংগ্রহ করে তাকে দেওয়ার জন্য। আর এভাবেই গড়ে ওঠে প্রশ্ন ফাঁসের পুরো চক্রটি।”
প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে গ্রেপ্তারদের মধ্যে অন্তত পাঁচ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।