ঢাবি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন সাদেকা হালিম

ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের আড়াই মাসের মাথায় শিক্ষকদের ভোটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 07:13 PM
Updated : 13 Dec 2017, 08:16 PM

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের প্রার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নুরুল আলম ব্যাপারীকে হারিয়ে ডিন নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৭০ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠার পর ৪৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী ডিন হলেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুষদের ডিন হিসেবে দ্বিতীয় নারী তিনি। তার আগে শুধু বিজ্ঞান অনুষদে একজন নারী ডিন নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের অবশিষ্ট মেয়াদে সাদেকা হালিম এই দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, এই অনুষদে ২৩৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২২২ জন শিক্ষক।এর মধ্যে ১২৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন সাদেকা হালিম।

নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি নীল দলের প্রার্থী ছিলেন সাদেকা হালিম।

গত ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নিবার্চিত হয়েছিলেন তৎকালীন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি অবসরে যাওয়ার পর ২ জুলাই অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন করা হয় টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভূইঁয়াকে। তার মেয়াদ শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত ডিনের দায়িত্ব পান অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

ভোটে জয়ী হওয়ার পর সহকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন অধ্যাপক সাদেকা হালিম

ঢাকার উদয়ন বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা সাদেকা হালিম উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন রাজধানীর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতক এবং ১৯৮৩-৮৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

১৯৮৮ সালের অগাস্টে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাদেকা হালিম পরবর্তীতে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিতে। সেখান থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি নেন তিনি।

এরপর সাদেকা হালিম কমনওয়েলথ স্টাফ ফেলোশিপ নিয়ে পোস্ট-ডক্টরেট করেছেন যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটি থেকে।

২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য কমিশনে প্রথম নারী তথ্য কমিশনার পদে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন সাদেকা হালিম।

২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এই অধ্যাপক তিন মেয়াদে শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও তিনবার সিনেট সদস্য ছিলেন।

অধ্যাপক সাদেকা হালিম জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটি-২০০৯ এর ১৮ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের কমিটিতে সদস্য ছিলেন।

পেশাগত জীবনে সাদেকা হালিম অতিথি অধ্যাপক হিসেবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার বকু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন স্টাডিজ বিভাগ ও আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হায়ার এডুকেশন লিংক প্রোগ্রামের অধীনে কুইন্স-এর ভিজিটিং ফেলো ছিলেন কিছুদিন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তার লেখা প্রায় ৫০টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। লিঙ্গ-সমতা, বন ও ভূমি, উন্নয়ন, আদিবাসী ইস্যু, মানবাধিকার এবং তথ্য অধিকার প্রভৃতি তার গবেষণার বিষয়।

অধ্যাপক সাদেকার বাবা অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরী ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সময়ে প্রায় সাত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।