উপাচার্যকে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সাবেক দুই নেতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 04:29 PM
Updated : 13 Dec 2017, 04:47 PM

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক উন্মুক্ত সংলাপে এই আহ্বান জানান তারা। ‘ডাকসুসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে’ এই সংলাপের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “বাংলাদেশে একাত্তর ও নব্বই সালে দুটি বিজয় সাধিত হয়েছে। সর্বশেষ নব্বই সালে বিজয়ের পরে আমরা ভেবেছিলাম প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারব। কিন্তু দুর্ভাগ্য দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রায়ন এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”

শুধু কেন্দ্রে একটি নির্বাচিত সরকার করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এজন্য দরকার দেশের প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন দিয়ে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, কর্মচারী, ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন হয়, শুধু শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন ছাড়া।”

শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ডাকসুসহ সব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “সরকার ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাধা দেয়- এটা আমাদের ভুল ধারণা। ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ উপাচার্যকেই নিতে হবে।

“শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যসহ সবাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায়। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালতেরও সিনেট পূর্ণাঙ্গ করার নির্র্দেশনা রয়েছে। তাই অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে।”

এই দাবিতে শিক্ষার্থীদের আরও দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর বলেন, “বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ছাত্র সংসদ নির্বাচন বা ডাকসু সম্পর্কে জানে না। তাই ডাকসু নির্বাচনের জন্য সর্ব প্রথম দরকার ছাত্র সমাজের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। দাবির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা। ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হলেই জাতীয় গণজাগরণ তৈরি হবে।”

ডাকসু নির্বাচন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান এই দাবিতে টানা ১৫ দিন অনশন করা ওয়ালিদ আশরাফ।

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন স্কুলের মতো চলছে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত চরিত্র না। আমরা অতীতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা দেখেছি, কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না।

“ডাকসু না থাকাই এই নির্জীবতার জন্য দায়ী। ডাকসু নির্বাচন শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার নয়- এটা প্রশাসনের দায়িত্বও বটে।”

ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জি এম জ্বিলানী শুভর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলী, ডা. মোস্তাক হোসেন, সাবেক সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না এবং চাকসুর সাবেক ভিপি শামসুজ্জামান হীরা বক্তব্য দেন।

‘উসকানিতে পড়া যাবে না’

বুধবারই টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা করবেন তারা। তবে শিক্ষার্থীদের কারও উসকানিতে ‘পা দেওয়া’ যাবে না।

তিনি বলেন, “আমরা ডাকসু নির্বাচন করব, ইনশাল্লাহ। ডাকসু না হওয়ার ২৭ বছরের সংস্কৃতি হতে বেরিয়ে আসতে চাই। ডাকসু নির্বাচন করার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তাই তাই গৃহীত হবে।কিন্তু উসকানিতে পড়লে নষ্ট হয়ে যাবে।”

শিক্ষার্থীদের সাবধানে এগোনোর পরামর্শ দিয়ে উপাচার্য বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন রাজনীতি করতেন তখন কেউ কেউ বলতেন, ভোটের বাক্সে লাথি মার, বাংলাদেশ মুক্ত কর। কিন্তু জাতির জনক ভোটের বাক্সে লাথি মারেননি, তিনি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে রাজনীতি করেছেন।

“আমরা এ ধরনের হটকারী উসকানিমূলক বক্তব্যে পড়ব না। সাতাশ বছরে যেটি (ডাকসু নির্বাচন) হয়নি, তার পেছনে অনেকগুরো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে, আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করছি।”