আমার জামাই দোষী কিনা তদন্ত করে দেখা হোক: আকায়েদের শাশুড়ি

নিউ ইয়র্কে আত্মঘাতী হামলার চেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ আকায়েদ উল্লাহ আসলেই দোষী কি না- তা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন তার শাশুড়ি মাহফুজা আকতার।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 07:05 AM
Updated : 13 Dec 2017, 02:50 PM

তিনি বলেছেন, “তদন্ত করে দেখা হোক, আমার জামাই আসলেই দোষী কিনা। দোষী হলে আইন অনুযায়ী যা হবার তাই হবে।”

এদিকে আকায়েদের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার শ্যালককেও বুধবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে বাস টার্মিনালের ব্যস্ত এলাকায় সোমবার সকালে বিস্ফোরণের পর আকায়েদকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আকায়েদ তার দেহের সঙ্গে বাঁধা বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন। তাদের ধারণা, জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে আকায়েদ ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

২৭ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি তরুণের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের আদালতে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা, জনসমাগমস্থলে বোমা হামলা, ধ্বংসাত্মক ডিভাইস ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ দায়ের করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে বাকি জীবন কারাগারেই কাটতে হতে পারে।

চট্টগ্রামের আকায়েদ বড় হয়েছেন ঢাকার হাজারীবাগে। সাত বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর প্রথমে ট্যাক্সিক্যাব চালালেও পরে একটি আবাসন নির্মাতা কোম্পানিতে বিদ্যুৎ মিস্ত্রির কাজ নেন।

ম্যানহাটনে বিস্ফোরণের ঘটনার পর আকায়েদ সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা জিগাতলার মনেশ্বর রোডে তার শ্বশুড়বাড়ির ঠিকানা পান।

পরে আকায়েদের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, শ্বশুর জুলফিকার হায়দার ও শাশুড়ি মাহফুজা আকতারকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আকায়েদ উল্লাহর এই ছবি তুলেছেন নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের একজন কর্মী

বুধবার সকালে মনেশ্বর রোডের ওই বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ছয়তলা বাড়িটির নিচতলার একপাশে আকায়েদের শ্বশুর সপরিবারে থাকেন।

দরজা বন্ধ দেখে খোলা জানালা দিয়ে ডাক দিলে মধ্য বয়সী এক নারী এসে সাংবাদিক পরিচয় জেনে কথা বলতে অস্বীকার করেন।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রাখার পর অনেক অনুরোধে বিরক্তি নিয়েই কথা বলতে আসেন ওই নারী, পরিচয় দেন যে তিনিই আকায়েদের শাশুড়ি মাহফুজা আকতার।

দরজার ওপার থেকে মুখ আড়াল করে কথা বলেন তিনি।

মাহফুজা বলেন, আকায়েদের মধ্যে জঙ্গিবাদী কোনো লক্ষণ তারা আগে দেখেননি।

“আগে এরকম দেখলে মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিতাম না।…  সেখানে সে বিপদে পড়েছে। এখান থেকে কিছু বলা যাবে না।”

পারিবারিকভাবেই ওই বিয়ে হয়েছিল জানিয়ে মাহফুজা বলেন, আকায়েদ নিউ ইয়র্ক থেকে বউ বাচ্চার জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতো। তবে গত সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ দেশে এসে ঘুরে যাওয়ার পর আর পাঠায়নি।

আকায়েদকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তাকে গ্রহণ করতে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান তার শাশুড়ি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখনও কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

মাহফুজার স্বামী জুলফিকার বসুন্ধরা সিটিতে একটি জুয়েলার্সের দোকানে চাকরি করেন। আর তার ছেলে হাফিজ মাহমুদ জয় ওই মার্কেটেরই একটি মোবাইল ফোনের দোকনে কাজ করেন।

বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর মাহফুজা রাগান্বিত হয়ে ‘অনেক কথা হয়েছে আর না’ বলে দরজা বন্ধ করে দেন। আবারও বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আরেক সংবাদকর্মী দরজায় টোকা দিলে মাহফুজা বলেন, “আপনাদের সাথে অনেক কথা হয়েছে। ডিবি পুলিশ যা যা জানতে চেয়েছে, গতকাল (মঙ্গলবার) তা বলেছি।”

আকায়েদের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

আকায়েদের স্ত্রী বলেন, তাদের বিয়ে হয়েছে গতবছর। ওই রকম হামলায় তার স্বামী জড়িত হতে পারে- এমনটা তার কখনও মনে হয়নি। 

সন্তান হওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে আকায়েদ যখন ঢাকায় এলেন, তখনও তার জীবন যাপন বা আচরণে অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি বলে জানান তার স্ত্রী।

ঘটনার দিন নিউ ইয়র্ক সময় ভোর ৫টায় ‘কাজে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতে’ আকায়েদকে ফোন দেন জান্নাতুল ফেরদৌস।

তখনই তার সঙ্গে শেষবার কথা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এর পরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই রকম কিছু ঘটবে, তা তিনি বুঝতে পারেননি।

এরপর মাহফুজা আবার দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পর সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরা মধ্য বয়সী একজন এবং এক তরুণকে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়।

মধ্যবয়সী ব্যক্তিটি সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় জানান, তার নাম আব্দুল আহাদ, আকায়েদ তার মামাত ভাই।

আহাদ বলেন, আকায়েদের জঙ্গিবাদ বা এধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার আভাস তারা কখনও পাননি।

এসময় তিনি জানান, তার সঙ্গে বেরিয়ে আসা ওই তরুণ আকায়েদের শ্যালক হাফিজ মাহমুদ জয়। ডিবি কার্যালয়ে যাচ্ছেন তারা।

হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে। কথা বলব না ভাই।”

হাফিজকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আকায়েদ সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”