বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট নিয়ে আদেশ ২ জানুয়ারি

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির বহু আলোচিত গেজেটটি প্রকাশ হলেও এক বিচারকের অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় তা জমা পড়েনি।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 05:05 AM
Updated : 13 Dec 2017, 05:06 AM

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ওই গেজেট গত সোমবার প্রকাশ করে সরকার, যা বুধবার এফিডেভিট আকারে বুধবার আপিল বিভাগে জমা দেওয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের।

কিন্তু বুধবার সকালে আদালত বসার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বলেন, বেঞ্চের পাঁচ বিচারকের মধ্যে একজন ব্যক্তিগত কারণে আসতে পারেননি।

এই শুনানি যেহেতু ফুল বেঞ্চে হয়ে আসছে, সেহেতু বুধবার আর হচ্ছে না জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর ২ জানুয়ারি আদেশের জন্য পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। 

বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আপত্তিতে তা বহু দিন ঝুলে ছিল।

এই শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের কাছ থেকে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই বিধিমালায় সব ‘ঠিকঠাক’ বলে মনে করলেও সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ এর ভেতরে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মৃত্যু’ দেখতে পাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের অন্যতম নেতা আমীর-উল ইসলাম বলেছেন, এই গেজেটের মধ্যে দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন করে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিকে এই বিধিমালার গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাকেই আপাতত বড় পাওয়া বলছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত বছর ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সিনহা।

শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

এরপর গত ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় সোমবার গেজেট প্রকাশ করে সরকার।