বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি: মিশ্র প্রতিক্রিয়া আইনজীবীদের

অধস্তন আদালতের বিচারকদের যে শৃঙ্খলা বিধি প্রণীত হয়েছে, তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের কাছ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকমেহেদী হাসান পিয়াসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2017, 02:50 PM
Updated : 26 Dec 2017, 11:37 AM

এই বিধিমালায় সব ঠিকঠাক দেখেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম; তবে সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ‘মৃত্যু’ ঘটেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের অন্যতম নেতা আমীর-উল ইসলাম মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন করে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিকে এই বিধিমালার গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব অবসান যে ঘটল, তাকেই আপাতত বড় পাওয়া বলছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।

দীর্ঘ জটিলতা পেরিয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আপত্তিতে তা বহু দিন ঝুলে ছিল।

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত বছর ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সিনহা।

শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

আনিসুল হক

এরপর গত ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান। তারপর সোমবার প্রকাশ হয় গেজেট।

সংবিধান অনুসরণ করে এই বিধিমালা প্রণয়ন হয়েছে দাবি করে আনিসুল হক বলছেন, বিচারপতি সিনহা এটি নিয়ে ‘রাজনীতি’ করতে চেয়েছিলেন বলে এই দেরি হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়েই বিচারপতি সিনহাকে সরকারের বিরাগভাজন হয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে এবং এই বিধিমালার মধ্য দিয়ে বিচারকদের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হল।

অ্যাটর্নি জেনারেল ‘ভারমুক্ত’

বিচারকদের চাকরির ‍শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধি নিয়ে আদালতের উষ্মা রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে সরাসরি শুনতে হত মাহবুবে আলমকে; তাই গেজেট প্রকাশের পর তার প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘ভারমুক্ত’ হলাম।

তিনি বলেন, “যেহেতু শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাঝখানে আমাকেই অবস্থান নিতে হয়, ফলে বার বার আমাকে সময় নিতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য নিশ্চয় বিব্রতকর ছিল। আমার সেই বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হল।”

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল সার্ভিস রুল বিধিমালা প্রণয়ন হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের অভিযোগ, অনুসন্ধান কীভাবে হবে, অভিযোগ অনুসন্ধানের পর তাদের সাময়িক বরখাস্ত কীভাবে হবে এবং তাদের অপরাধ তদন্ত কীভাবে হবে, তার বিস্তারিত এই বিধিমালায় আছে।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে আছে- বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচারবিভাগীয় দায়িত্বপালনে রত ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) ও শৃংখলাবিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রীম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।

প্রকাশিত গেজেটের প্রথম পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই বিধিমালা প্রণয়ন করেছেন।

১৩৩ অনুচ্ছেদে রয়েছে- এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন: তবে শর্ত থাকে যে, এই উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিয়া বিধিসমূহ-প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং অনুরূপ যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হইবে।

প্রকাশিত গেজেটে ১১৬ অনুচ্ছেদের প্রতিফলন ঘটেছে দাবি করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “রাষ্ট্রপতি যে কোনো পদক্ষেপই নেন না কেন, তা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই হবে।”

মাহবুবে আলম

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন স্তরে পদক্ষেপের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এছাড়া যদি সুপ্রিম কোর্ট মনে করে কোনো বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে তারা রাষ্ট্রপতিকে জানাতে পারবে।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের অভিযোগগুলোর তদন্ত এবং সেটার ফয়সালা কীভাবে হবে- জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমেই পদক্ষেপ নেবেন। দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেবেন।

আগের খসড়ার সঙ্গে প্রকাশিত বিধিমালার তফাতটা কী ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিল, আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি সেটা হল, সমস্ত ক্ষমতাটা সুপ্রিম কোর্টের হাতেই থাকবে।

“সেটা তো সংবিধানবিরোধী একটা অবস্থান। সংবিধানে আছে, রাষ্ট্রপতি করবেন, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন।

“সংবিধান যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় তো সর্বময় ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে দিয়ে দেওয়া যায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, রাষ্ট্রপতি হলেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।”

প্রকাশিত গেজেটে অসঙ্গতি থাকার প্রশ্নই আসে না দাবি করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “কারণ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আইনমন্ত্রী বসেছেন এবং আমি যতটুকু জানি, তাদের দেখিয়েই এটা করা হয়েছে।”

আদালতের কাছে একটা দরখাস্ত দিয়ে বুধবার গেজেটটি দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।

স্বাধীনতার মৃত্যু: মওদুদ

বিচারকদের এই শৃঙ্খলা বিধিমালাকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের ‘মৃত্যু ঘটেছে’।

সাবেক এই আইনমন্ত্রী মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, “এর মাধ্যমে নিম্ন আদালতের বিচারকগণ সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। এখন আর বলা যাবে না যে, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান।”

মওদুদ বলেন, এই বিধিমালার মাধ্যমে সরকারের আইন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‘সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ’ করবে।

মওদুদ আহমদ

 

এই শৃঙ্খলা বিধি সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

২২ অনুচ্ছেদে রয়েছে- রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন৷

মাসদার হোসেন মামলার প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ বলেন, “ওই মামলায় বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ করার সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশ ছিল, এটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। আমরা মনে করি, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর একটি চরম রাজনৈতিক আঘাত।”

এই বিধিমালার বিরোধিতায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন এই বিএনপি নেতা।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীনও একই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে মাসদার হোসেন মামলার মূল চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিচার বিভাগকে সরকারের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

স্বাধীনতা খর্ব: আমীর

এই বিধিমালার গেজেটে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য এম আমীর-উল ইসলাম।  

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যখন সংবিধান তৈরি করেছিলাম তখন বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের বিষয়টাতে প্রাধান্য দিয়েছিলাম। এজন্য অধস্তন আদালতের উপরে ১১৪, ১১৫, ১১৬ পরিচ্ছেদ আমরা দিয়েছিলাম। অর্ধাৎ অধস্তন আদালত কিন্তু আমাদের সংবিধানের একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলা যেতে পারে।

“এখন তাদের যদি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিধি-বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেটা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং এটি মাসদার হোসেন মামলার পরিপন্থি।”

এম আমীর-উল ইসলাম

“আইনমন্ত্রীর ভূমিকা দিয়ে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা রিপ্লেস করা যায় না, এটা করাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বৈশিষ্ট্য, পৃথকীকরণ খর্ব করা হয়েছে,” বলেন ব্যারিস্টার আমীর।

বিধিমালা প্রণয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “গেজেটের বিষয়ে আমি কিছু বলছি না। কী রুলস তৈরি করেছে, সেটাও আমি দেখিনি। আমার বিষয়টা হচ্ছে প্রক্রিয়া নিয়ে।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ উদ্বৃত করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি পরামর্শ করবেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে। এখানে কোনো মন্ত্রণালয় আসার স্কোপ নেই।

“তারা ১৩৩ অনুচ্ছেদের অধীনে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে নিয়ে গেছে। কিন্তু করবার কথা ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে। রাষ্ট্রপতি ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এখানে (প্রকাশিত গেজেটে) কোনো কাজ সম্পাদন করেছেন বলে লেখা নেই। কিন্তু ১১৬ অনুচ্ছেদের অধীনেই রুলসটি করার কথা।”

নিম্ন আদালদের বিচারকদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি এবং ছুটি মঞ্জুরির বিষয়টা আদালতে রয়েছে বলে সেখানেও তার আলোচনার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তিনি।

বিষয়গুলো সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনবেন জানিয়ে আমীর বলেন, “আমি ইতোমধ্যেই দু-তিন দিন কোর্টকে বলেছি। ভেতরে ভেতরে কী আলোচনা হচ্ছে, কেউই জানতে পারছি না। আমি উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।”

অসুবিধা হলে সংশোধন হবে: শফিক

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বিধিমালা প্রকাশের ফলে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাকেও বড় পাওয়া হিসেবে দেখে বলেছেন, পরে সমস্যা হলে তা সংস্কারও করা যাবে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন বা বিধি তো বাইবেল না যে পবির্তন করা যাবে না। এটার কার্যকারিতা আছে। যদি কখনও মনে হয় অসুবিধা আছে, তাহলে সংশোধন করা যেতে পারে। যদি এমন বিধান থাকে যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, তবে সেটা সংশোধন করা যেতে পারে। আইনও তো বাতিল হচ্ছে। আর এটা তো বিধি।”

শফিক আহমেদ

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক দিনের একটা দাবি ছিল নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি এবং আচরণ বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হোক। বিলম্ব হলেও এটা প্রকাশিত হয়েছে।

“বিশেষ করে বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল, আমার মনে হয় বিধি প্রকাশের পর ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই এবং আগে যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এই গেজেটে কতটুকু সুরাহা করা হয়েছে।”

গেজেট প্রকাশে প্রক্রিয়াগত কোনো ত্রুটি ঘটেছে বলে ম,নে করেন কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আইনমন্ত্রীর কয়েকটা সিটিং দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট একমত হয়েছে এবং সে আলোকেই কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব এটা যখন তিনি অনুমতি দিয়েছেন, এটা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।”

সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, “বিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, অদক্ষতা যাই থাকুক কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই প্রসেসটা কমপ্লিট করার পরে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে অদেশ দেবেন।

“সরাসরি কোনো ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারবে না। এটার প্রসেসটা হল, সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোনো ফাইল ইনিশিয়েট হলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে বাহকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে।”

বিচার বিভাগকে ‘সরকারিকরণ’ করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি দেখছি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সঙ্গে দফায় দফায় বসে এই বিধিটা কিন্তু অ্যাপ্রুভ করা হয়েছে। কেউ বলতে পারবে না যে, উনাদের সাথে বসে যেটা স্থির হয়েছিল, তা বদলে দেওয়া হয়েছে।

“আর সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বলতে এই না যে শুধু প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। সুপ্রিম কোর্ট কি এখন চলছে না?”