আকায়েদ: নিউ ইয়র্কের ট্যাক্সি চালক থেকে ‘বোমা হামলাকারী’

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকায় বাস টার্মিনালে আত্মঘাতী বোমা হামলার চেষ্টার সময় আকায়েদ উল্লাহ নামের যে বাংলাদেশি তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি ফ্যামিলি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন সাত বছর আগে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2017, 08:54 AM
Updated : 13 Dec 2017, 02:29 PM

নিউ ইয়র্ক পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ বছর বয়সী আকায়েদ প্রথমে ট্যাক্সি চালাতেন; পরে একটি আবাসন নির্মাতা কোম্পানির বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির চাকরি নেন।

ব্রুকলিনের অ্যাপার্টমেন্টে বসে ইন্টারনেট ঘেঁটে তিনি বোমা বানানো শেখেন এবং ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজের সূত্রে কর্মস্থলে বসেই বোমা তৈরি করেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা। 

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী, সোমবার সকালে অফিসগামী যাত্রীদের ব্যস্ততার মধ্যে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে ম্যানহাটনের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে যাওয়ার সংকীর্ণ ভূগর্ভস্থ পথে নিজের শরীরে বাঁধা ওই ‘পাইপ বোমায়’ বিস্ফোরণ ঘটান আকায়েদ।

বোমাটি ঠিকমত বিস্ফোরিত না হওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন আকায়েদ। তার বিস্ফোরণে আহত হন তিন পুলিশ সদস্য।

আকায়েদ উল্লাহ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নের ভূটান তালুকদার বাড়ির মো. সানাউল্লাহর ছেলে। বাবার ব্যবসার সূত্রে আকায়েদ বড় হয়েছেন ঢাকার হাজারীবাগে।

২০১১ সালে ফ্যামিলি ভিসায় পরিবারের সবার সঙ্গে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পর ব্রুকলিনেই বসবাস করে আসছিলেন তিনি। 

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি লাভলু আনসার জানিয়েছেন, বছর দুই আগে নিউ ইয়র্কেই মারা যান আকায়েদের বাবা সানাউল্লাহ। তার এক ভাই, বোন ও মা রয়েছেন নিউ ইয়র্কে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

ওই পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিকে বলেছেন, বাংলাদেশে থাকার সময় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাংগঠনিক তৎপরতায় জড়িত ছিলেন আকায়েদ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে জামায়াত-শিবিরের সমর্থকদের নিয়ে গঠিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে আকায়েদকে তেমনভাবে দেখা যায়নি। ব্রুকলিনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে সন্দ্বীপ প্রবাসীদের কোনো অনুষ্ঠানেও তার যাতায়াত ছিল না।

আকায়েদকে চিনতেন এমন একজন বলেছেন, বরাবরই নিজের মধ্যে নিবিষ্ট হয়ে থাকতেন ওই তরুণ। মসজিদে গেলেও কারও সঙ্গে তেমন আলাপ করতেন না।

নিউ ইয়র্ক প্রবাসী এক বাংলাদেশি ঠিকাদারের অধীনে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতেন আকায়েদ। একসময় ট্যাক্সি চালানোর লাইসেন্সও তার ছিল। পেশাগত কারণে আকায়েদের সঙ্গে মেলামেশা ছিল- এমন লোকজনও তার আত্মঘাতী হামলাচেষ্টার খবরে অবাক হওয়ার কথা বলেছেন। 

স্থানীয় এক বাসিন্দার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদমাধ্যম লিখেছে, আকায়েদদের পরিবারকে ইসলামি রীতিনীতি মেনে চলা একটি শান্তশিষ্ট পরিবার হিসেবেই তিনি জানতেন। উগ্রপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে পারে- এমন সন্দেহ কখনও তার হয়নি। তবে গত কয়েক মাস আকায়েদের সঙ্গে তার দেখা হয়নি।

আকায়েদ উল্লাহ, ছবি: রয়টার্স

আলিন যোগরাজ নামের এক স্কুলশিক্ষক জানান, আসা-যাওয়ার পথে আকায়েদের সঙ্গে তার দেখা হত। রোজার পর আকায়েদদের বাসায় দাওয়াত খেতেও তিনি গেছেন। প্রতিবেশী সবার সঙ্গেই ওই পরিবারের সদ্ভাব ছিল। সোমবারের ঘটনায় তিনিও বিস্মিত হয়েছেন। 

নিউ ইয়র্ক সিটি ট্যাক্সি অ্যান্ড লিমোজিন কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত লিমোজিন বা ব্ল্যাক ক্যাব চালানোর লাইসেন্স ছিল আকায়েদের। পরে তিনি আর তা নবায়ন করেননি। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি জানান, আকায়েদের চাকরিদাতা সেই বাংলাদেশি ঠিকাদার বর্তমানে দুবাইয়ে আছেন। তার সঙ্গে কথা বলা গেলে হয়ত ওই তরুণের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

আহত আকায়েদকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ম্যানহাটনের বেলভিউ হাসপাতালে। সেখানে তার বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক পুলিশের কমিশনার জেমস ও’নিল সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে সে ওই ঘটনা ঘটায়।

বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হককে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন আকায়েদ। তবে বাংলাদেশে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই।

তদন্তের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে আকায়েদের যোগাযোগের নিশ্চিত কোনো তথ্য তারা এখনও পাননি। তবে তার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা পুলিশ এখনই নাকচ করছে না।

অক্টোবর নিউ ইয়র্কের রাস্তায় পথচারীদের ওপর ট্রাক উঠিয়ে আটজন হত্যার ঘটনায় যে উজবেক অভিবাসীকে দায়ী করা হয়, আকায়েদও তার মত জিহাদি কোনো গোষ্ঠীর প্রভাবে একাকী হামলা চালানোর পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো।

তিনি বলেন, “তারা দুজনেই ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়েছে। আকায়েদ ওইভাবেই বোমা বানানো শিখেছে।… তারা বিদেশ থেকে আসেনি, তারা এখানেই বসবাস করত।”