শোভাযাত্রা-আলোচনায় আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শোভাযাত্রা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনার মাধ্যমে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2017, 03:06 PM
Updated : 11 Dec 2017, 03:06 PM

বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব, নেপাল দূতাবাস ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিস্ট সোসাইটির উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবিরহাট এলাকা থেকে শহীদ মিনার পযন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়। এতে এভারেস্ট জয়ী এম এ মুহিত ও নিশাত মজুমদারসহ বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালের শিক্ষার্থী, নেপাল দূতাবাসের সদস্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিস্ট সোসাইটির সদস্য ও তরুণ পর্বতারোহীরা অংশ নেন।

শোভাযাত্রা শেষে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে নাগরিক সংলাপ হয়।

এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন ধন বাহাদুর ওলী, এভারেস্টজয়ী এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদারসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অ্যান্টার্কটিকা ও সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হক।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “আমাদের একদিকে নেপালে পর্বত, আরেক দিকে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর। এই যে সংযোগ তা না থাকলে আমাদের পুরো দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্য পড়ত। আমরা একটা চেইনের মধ্যে আছি, সেখানে পর্বত আছে, সাগর, নদী ও বাংলাদেশের মত সমতল ভূমি আছে। এসব মিলে যে চেইন এর মধ্যে পর্বত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বতের সাথে সভ্যতার সম্পর্ক রয়েছে।”

“কিন্তু জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে পর্বতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আজ পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, তার মধ্যে পর্বতও। এই বাস্তবতা কে রক্ষা করবে? এই বিষয়গুলো রক্ষার জন্য আমাদের মানসিতা গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে, তবে তা শুধু কোনো একটি প্রতিষ্ঠাই নয় সবাইকে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে।”

ধন বাহাদুর ওলী বলেন, “বাংলাদেশ ও নেপাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল রয়েছে। তাদের জীবনাচার অনেকটাই একই ধরনের। ভৌগলিক অবস্থার কারণে পুরো ভারতবর্ষের এই মিল। নেপালে পর্বতে যখন ধস হয় তখন এর প্রভাব পড়ে সমতল, উপকূল ও সাগরে। দূষণের কারণে পাহাড়-পর্বতও ঝুঁকিতে পড়ছে। দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।”

এম এ মুহিত বলেন, “আমাদের দেশের মাটির উর্বরতা, নদী ও সমুদ্র হিমালয়কে কেন্দ্র করে টিকে আছে। আমাদের নদীগুলো কোনো না কোনোভাবে হিমালয়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। হিমালয় পর্বত থেকে বরফ গলে নদীগুলো বেঁচে আছে। আমাদের পাহাড়গুলোও এই পর্বত কেন্দ্রীক। আমাদের কৃষিও এই হিমালয় কেন্দ্রীক, কিন্তু হিমালয় পর্বতে এখন বেশি বেশি ফাটল হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে, যা পর্বতরোহীদের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমননি মানুষের জীবন-জীবিকার উপর এর প্রভাব পড়ছে।”

তিনি বলেন, “প্রকৃতির মধ্যে কোনো অপচনশীল বস্তু ফেলা যাবে না, এসব পরিবেশকে মারাত্মক ক্ষতি করে। পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।”

মিশাত মজুমদার বলেন, “পাহাড়-পর্বতকে ভালবাসি বলেই আমরা এর কাছে যাই। কিন্তু পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে সাদা হিমালয় পর্বত আমাদের চোখের সামনে কালো হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের সবুজ পাহাড়ের বুকেও আজ কান্না। এই কান্না বন্ধ করতে হবে। ভূমি ধসে মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। সবাইকে যার যার জায়গা থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।”

জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস ঘোষণা করে। বাংলাদেশে ২০০৫ সাল থেকে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে।