ভর্তিতে বিয়ের তথ্য চাওয়া অসাংবিধানিক নয় কেন: হাই কোর্ট

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা জানতে চাওয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2017, 01:41 PM
Updated : 11 Dec 2017, 01:41 PM

ধর্ষণের পর সন্তান জন্ম দেওয়া এক শিক্ষার্থীর ভর্তি জটিলতার বিষয়ে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রুল দেয়।

একইসঙ্গে ওই শিক্ষার্থীকে রাজশাহী সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি করতেও নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট, যার ভর্তিতে স্বামী পরিত্যক্তা লিখতে বলেছিলো নার্সিং কলেজ।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক, আইনুন নাহার সিদ্দিকা ও ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।

পরে আইনুন নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা জানতে চাওয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এবং এ বিষয়ে একটি অর্থপূর্ণ নীতিমালা কেন করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

মেয়েটিকে অবিলম্বে নার্সিং কলেজে ভর্তি করতে নির্দেশ দিয়ে ৪ জানুয়ারি শুনানির দিন রেখে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ওই সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব, আইন সচিব, নারী ও শিশু সচিব, মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও নার্সিং অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবী।

গত ১৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘মেয়েটি এখন কী করবে?’ শিরোনামের প্রতিবেদন যুক্ত করেন হাই কোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাহরিয়া ফেরদৌস ও নাহিদ সুলতানা জেনি।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ জুন দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ষণের শিকার এক মেয়েকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের লোকজন চাপ দিতে থাকেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এ নিয়ে সালিশও বসে। কিন্তু সেখানে অভিযুক্ত যুবক সবকিছু অস্বীকার করে এক পর্যায়ে সালিশ ভেঙে যায়। এদিকে প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে মেয়েটির পরিবার মামলাও করতে পারছিল না।

এক পর্যায়ে ধর্ষিতা সন্তানসম্ভবা হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়; সেখান থেকেই ধর্ষণ মামলা করা হয়।

মামলার পর পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই যুবক, মেয়ে ও তার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় প্রমাণ হয় ওই যুবকই শিশুটির বাবা।

পরে আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। এক পর্যাযে আদালত ওই মেয়েটিকে ‘মহিলা সহায়তা কর্মসূচি’র রাজশাহী বিভাগীয় আবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সেখানে থেকেই মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

পরীক্ষা চলাকালে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।

এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ১৯ পেয়ে পাস করেন মেয়েটি। পরে ওই আবাসনকেন্দ্রে থেকেই এইচএসসি পরীক্ষায়ও অংশ নেন।

পরীক্ষা শেষে ওসিসির আইনজীবী আশুরা খাতুন এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী দিল সেতারার সহযোগিতায় মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে আসেন।

এরই মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এবার জিপিএ-৩ দশমিক ১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মেয়েটি।

এদিকে গত ৩০ মে বিচারিক আদালতের রায়ে ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আদালতের রায়ে সন্তানের দায়ভার বাবাকে নিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাবার ১ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।

এইচএসসি পাশের পর রাজাহী সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হতে গেলে সৃষ্টি হয় জটিলতার। বিবাহিত না হয়েও ভর্তিচ্ছু মেয়েটি তখন এক সন্তানের মা।

রাজশাহী সরকারি নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মনিজ্জা খাতুনকে উদ্বৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় অবশ্যই অবিবাহিত লিখতে হবে। অথবা স্বামী পরিত্যক্তা লিখতে হবে। তা ছাড়া সন্তান হওয়ার বিষয়টি পরীক্ষায় ধরা পড়বে। এই ক্ষেত্রে মেয়েটিকে স্বামী পরিত্যক্তা লিখতে হবে।”

কিন্তু মেয়েটি বিবাহিতও না, স্বামী পরিত্যাক্তও না। ফলে কোনো দলেই সে পড়েন না।

এই অবস্থায় হাই কোর্টে রিট করলে সোমবার রুলসহ ভর্তির এ আদেশ দিল আদালত।