বিচারকদের শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির সেই গেজেট প্রকাশ

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির বহু আলোচিত গেজেটটি প্রকাশ হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2017, 11:29 AM
Updated : 11 Dec 2017, 11:29 AM

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার বিকালে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “শৃঙ্খলা বিধির গেজেটে হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে প্রকাশ শুরু হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, আর ৪৫ মিনিটের মধ্যে পাবলিশড হয়ে যাবে।”

এই বিধিমালায় আপত্তি জানিয়ে তা ফেরত পাঠিয়েছিলেন পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

তার ঘটনাবহুল পদত্যাগের পর দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে আইনমন্ত্রীর আলোচনার পর বিধিমালা চূড়ান্ত হয়।

আনিসুল হক বলেন, “মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। তাদের সাথে একটা ঐকমত্যে পৌছে এই শৃঙ্খলা বিধির গেজেট আজ প্রকাশ করা হচ্ছে।”

বিচারপতি এস কে সিনহা এই বিধিমালা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছিলেন বলে দাবি করেন আইনমন্ত্রী।

“এই শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে অনেক নাটক হয়েছিল। আমি আজ আপনাদের বলব, বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।

“একজন ব্যক্তি এটাকে রাজনীতিকরণ করার চেষ্টার কারণে এটা বিলম্বিত হয়েছিল। সেটা যখনই রিমুভড হয়ে হয়ে গেছে, আমরা কিন্তু বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের ঐকমত্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে আজকে গেজেট করতে পেরেছি।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গতবছর ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকারের সঙ্গে আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে থাকে।

আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সিনহা।

শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

বিচারপতি এস কে সিনহা

এরপর গত ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হয়েছে।

এরপর তিনি সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন প্রমোটিং ইকোয়ালিটি, জাস্টিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আসার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে গেজেট প্রকাশের তথ্য জানান।

আনিসুল হক বলেন, “কিছু কিছু প্রতিকূলতা আছে। এই প্রতিকূলতাগুলো কিন্তু আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। একটু সময় হলে আমি মনে করি অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারব।”

নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির। তিনি কখন নিয়োগ দেবেন, সেটা তো তিনি আমাকে বলবেন না।”

আইনমন্ত্রী একইসঙ্গে বলেন, অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি সংবিধান অনুসারে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ সব কাজই করতে পারেন।

“তিনি বিচারপতি নিয়োগ দিলেও সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ লংঘন করা হয় না।”