পাহাড়ে ‘অপরিকল্পিত’ বনায়নে ক্ষুব্ধ প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর

পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অপরিকল্পিত’ বনায়ন করা হচ্ছে বলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ওপর ক্ষোভ ঝেরেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2017, 10:57 AM
Updated : 11 Dec 2017, 10:57 AM

সোমবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “কোথায় সম্পদ সৃষ্টি করবে, তা না করে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বনায়ন করা হচ্ছে। কোথায় কোন গাছ কিভাবে, কতটা লাগানো উচিৎ তার কোনো পরিকল্পনা নেই।”

পার্বত্য অঞ্চলকে সুরক্ষার পাশাপাশি তার মন্ত্রণালয় বনায়ন ও জুম চাষের নানা পরিকল্পনা করলেও পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘পার্বত্য অঞ্চলের ঝুঁকি: জুলবায়ু, ক্ষুধা, অভিবাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পাহাড় ধস, জুম চাষ ও বনায়ন পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর।

তিনি জানান, ৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্বত্য জেলাগুলোতে ১৩ হাজার বাঁশ বাগান তৈরি করা হবে, পরে বাঁশভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প গড়ে তোলা হবে।

দেশে ৩৫ প্রজাতির মধ্যে সাত প্রজাতির বাঁশ পাহাড়ে হয় বলে জানান তিনি।

বীর বাহাদুর বলেন, “বাঁশ পাহাড়ের মাটি ও পানি ধরে রাখে। কিন্তু বন বিভাগ সেই বাঁশ উৎপাদনের দিকে নজর না দিয়ে সেখানে সেগুন, ইউক্যালিপটাসের মতো জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী বৃক্ষ রোপন করে চলেছে। পাহাড়ে কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই অনেক গাছ জন্মায়। সেই গাছগুলোর পরিচর্যা করলে কিন্তু সেখানে আলাদা করে কোনো বনায়নের দরকার পড়ে না। অথচ সেদিকে বন বিভাগের কোনো নজর নেই।”

তিনি বলেন, “পাহাড়ে ফলের গাছের পাশাপাশি এখন আমাদের মসলা জাতীয় উদ্ভিদের চাষও বাড়াতে হবে। এক মণ ফলের চেয়ে সামান্য কিছু মসলাতে কিন্তু লাভ অনেক।”

চলতি বছর মে মাসে বান্দরবানের থানচিতে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কি করছে- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন,  ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যাতে এমন খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা করা যাবে। পাহাড়ে হর্টি-কালচার প্রযুক্তি নিয়েও কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পাহাড়ে ঘনবসতি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়ে বীর বাহাদুর বলেন, “সবাই ভাবছে, পাহাড়ে এত বিরান ভূমি পড়ে আছে, সেখানে জনবসতি স্থাপন করা যাক। কিন্তু সত্যি ব্যাপার হল, এখন পাহাড়ে জনসংখ্যা যা আছে, তা অতিরিক্ত।”

পাহাড়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে নিজস্ব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সুপরিকল্পিত চিন্তা প্রণয়ণের কথাও জানান তিনি।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির বন ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রধান কারিগরি বিশেষজ্ঞ রাম এ শর্মা।

সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের প্রথম সচিব কাজী গোলাম রহমান, সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু।

বক্তারা পাহাড়ে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত খাদ্য পণ্য আর কুটির শিল্পের নানা পণ্যের বিকাশে সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া পাঁচ দিনের পার্বত্য মেলা সোমবার শেষ হয়েছে।

পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সমতলের মানুষদের পরিচয় করিয়ে দিতে এই আয়োজন করে পার্বত্য মন্ত্রণালয়।

মেলায় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ৯২টি স্টল ছিল।

মেলার পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও ছিল প্রতিদিন।