প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা: বিএনপি

বিদেশে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহার করা না হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2017, 08:18 AM
Updated : 8 Dec 2017, 05:27 PM

শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কল্পিত পাচারকৃত সম্পদের বর্ণনা এবং কল্পিত সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশের কল্পিত কাহিনী প্রকাশ করেছেন যা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।”

দেশের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর’ ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা এবং তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেই এর উদ্দেশ্য বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। 

তিনি বলেন, “অলীক মিথ্যা তথ্য প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।… এই মানহানিকর তথ্য প্রচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা বাধ্য হব।”

সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে বিদেশি একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সৌদি আরবে।

বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ওই প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই খবর কেন শুধু দুটি সংবাদপত্র ও দুটি টেলিভিশনে প্রকাশ করা হল, কেন অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো তা প্রকাশ ও প্রচার করল না- সেই প্রশ্ন তুলে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “সৌদি আরবে যে বিশাল শপিং মল পাওয়া গেল; এটা তো আমরা বলিনি। এই খবর দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখলাম না।

সম্পাদকরা বিনা পয়সায় শপিং করার কার্ড পেয়েছেন কি না, সেই কারণে খবরটি চেপে গেছেন কি না- এমন প্রশ্নও তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সামনে তোলেন। 

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত দ্য ডেইলি অবজারভারে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ১ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনে সংবাদের উৎস বলা হয়েছিল, আরবভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলোকে উদ্ধৃত করে ‘গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন)’ এবং ‘কানাডার টিভি চ্যানেল দ্য ন্যাশনাল’ এই খবর দিয়েছে।

ইন্টারনেট ঘেঁটে ‘দ্য নাশনাল’ নামে কানাডার কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কানাডার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে দ্য নাশনাল নামে একটি নিউজ প্রোগ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে সেখানে সার্চ দিয়ে খালেদা সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আর গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক নামে কোনো গণমাধ্যম ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

‘বাংলা ইনসাইডার’ নামে একটি পোর্টালেও ‘খালেদার সম্পদের’ খবরটি ছাপা হয়েছে; সেখানে কোনো সূত্রের উদ্ধৃতি নেই। এই সংবাদপত্রটি ইতোপূর্বে ভুয়া খবর প্রকাশের জন্য আলোচনায় আসে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে শুক্রবার সকালে বিএনপির ডাকা ‘জরুরি সংবাদ সম্মেলনে’ ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বক্তব্য শুধু অশালীন নয় এটা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কারো বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচার অথবা বিনিয়োগ কোনো অভিযোগ আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি।”

বিএনপি চ্যালেঞ্জ করছে কিনা- এ প্রশ্নে মহাসচিব বলেন, “আমরা বলছি তো, ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অবশ্যই আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমরা অবশ্যই দিচ্ছি। আমাদের পুরো বক্তব্যের মধ্যে সেটা এসেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, তারা গুগল সার্চ করেছেন, সৌদি আরবে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু কোথা থেকে ওই তথ্য এসেছে- তার ‘অস্তিত্ব’ পাননি।

সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন,  “অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের চেয়ারপারসন ও তার ফ্যামিলির বিরুদ্ধে একটা ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে। এতে আপনাদেরও আঘাত করা হয়েছে, যেহেতু আপনারা  ভুয়া তথ্য দেননি, সম্প্রচার করেননি। সেজন্য আপনাদেরকে রসগোল্লা খাওয়ার কথা বলা হয়েছে, কার্ড পেয়েছেন কি না, কত টাকার শপিং করবেন- এসব বলা হয়েছে।”

আইনানুগ কী ব্যবস্থার কথা বিএনপি ভাবছে জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, “আইনানুগ ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় তাই বুঝিয়েছি। আমরা বলেছি যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে এবং বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। তা যদি না করেন তাহলে আইনের যে বিধান আছে, সে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

সেই ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হবে কিনা- এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের বক্তব্য তো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে।… নামও বলেছি। … আমার বক্তব্যের শুরুতেই বলেছি।”

বিএনপি মহাসচিবের ভাষায়,  প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ক্ষমতাসীনদের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক সংকীর্ণতা, অন্তঃসারশূন্যতা ও দেউলেপনার’ প্রমাণ। এটা রাজনীতিকে ‘কুলষিত করছে’ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে ‘ভ্রান্ত ধারণা’ দিচ্ছে।

‘কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়বেন না’

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাল্টা অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল বলেন, “কাচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছুড়বেন না। উন্নয়নের মেগা প্রজেক্টের নামে যে মেগা লুট করছেন তা জনগণ জানে।”

পদ্মাসেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বর্তমান সরকারের নেওয়া বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর আন্তর্জাতিক টেন্ডারে ‘বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার’ লুট হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

“দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে এই দুর্নীতির মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা কারা লুট করেছে জনগণ তার হিসাব রাখছে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অবিলম্বে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাংগঠিনক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।