সংগঠনটি প্রস্তাবিত ‘সড়ক পরিবহন আইনে’ তহবিল গঠনের বিষয়টি যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান।
চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় সম্প্রতি চার কোটি ৬১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাই কোর্টের রায়ের পর যাত্রীদের সংগঠনটি এই দাবি তুলল।
মোজাম্মেল বলেন, “বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তার ইতিহাসে প্রথম রায় হচ্ছে সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মন্টুর মামলার রায়, এই রায়টি হয়েছিল তার মৃত্যুর প্রায় ২৫ বছর পর।
“এরপর দ্বিতীয় রায় পেতে তারেক মাসুদের পরিবার পাঁচ বছর পার করেছে। তারেক মাসুদের পরিবার আমেরিকা থেকে এসে আদালতের বারান্দায়-বারান্দায় ঘুরে এই রায়টি পেয়েছে।”
বাংলাদেশে প্রতি বছরই সড়কে বহু প্রাণ ঝরে পড়ে। পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার ৩১৬টি দুর্ঘটনায় ৪৫ হাজার ৪৯৫ জন নিহত এবং ৩৮ হাজার ৭৭০ জন আহত হন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে, তা মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৬ শতাংশের সমান।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতা মোজাম্মেল বলেন, “এখানে সড়কে মারা গেলে কেউ ক্ষতিপূরণ পায় না, কোনো বিচার নেই, সেটা মানুষের মধ্যে একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে পরিণত হচ্ছিল। এই সময়ে যে রায় হয়েছে, এটি একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী রায়।
“আমরা মনে করি ৫ বছর বা ২৫ বছর আদালতের বারান্দায় না ঘুরে যাতে সহজে ক্ষতিপূরণ পেতে পারে এই জন্য আমরা চাই ‘সড়ক নিরাপত্তা তহবিল’ নামে একটি তহবিল করা হোক।”
তহবিলের অর্থ জোগানের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে মালিক ও যাত্রীরা অংশ নিতে পারেন। যাত্রীদের টিকেটে যদি ২/৫ টাকা নিরাপত্তা তহবিল হিসেবে সংযুক্ত করে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেওয়া যায়, সরকার যদি একটা বরাদ্দ দিয়ে তহবিল গঠন করে, তাহলে প্রতিদিন যারা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন, তারা যেন এই তহবিল থেকে চিকিৎসা সহযোগিতা নিতে পারেন।
“যারা মারা যাবেন তাদের পরিবার পুনর্বাসনের জন্য এই তহবিল থেকে যদি নির্দিষ্ট অংশ দেওয়া যায়।”
এতে সুপারিশ গ্রহণ হলে তা সড়ক নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল।
সভায় সাবেক সচিব ভূইয়া শফিকুল ইসলাম বলেন, “পরিবহনের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে পদে পদে চাঁদা দিতে হয়। এত চাঁদা যারা দেয় তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ আর কীভাবে থাকে? এই চাঁদা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।”
সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন সাবেক এই সচিব।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক হারুন অর-রশিদ বলেন, “আমি মনে করি একজন চালক ইচ্ছে করে কোনো মানুষ মারেন না। তার অদক্ষতা ও মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকতে পারে। এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৯০ শতাংশ চালক মাদকাসক্ত।”
সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে গবেষণায় কথা উল্লেখ করে বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, একটি দুর্ঘটনা একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কারণেই ঘটে না। এখানে অনেক কারণ ও অনেকেই জড়িত থাকতে পারে। এই জন্য সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সঠিক তদন্ত জরুরি।
আলোচনায় গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ খান এবং সড়ক পরিবহন লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বক্তব্য দেন।