দেশে সুযোগ থাকলে তরুণরা প্রবাসী হবে না: নাফিস বিন জাফর

প্রতিভা বিকাশের পথে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের তরুণ তথ্য-প্রযুক্তিবিদরা প্রবাসী হবে না বলে মনে করেন অস্কারজয়ী সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ নাফিস বিন জাফর।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2017, 12:11 PM
Updated : 7 Dec 2017, 01:10 PM

তথ্য-প্রযুক্তি আসর ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ এ যোগ দিতে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এদেশের তরুণ তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে অমিত সম্ভাবনাও দেখতে পান।

নাফিস বলেন, “আমি জানি তরুণরা এখন অ্যানিমেশনে দারুণ কিছু করে দেখাচ্ছে। মোবাইল বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস, গেমস ডেভেলপমেন্টের মতো এই অ্যানিমেশন ব্যাপারটা নিয়ে ওরা ভাবছে, উদ্ভাবনী কিছুও করে দেখাচ্ছে। ওদের মধ্যে যে ট্যালেন্ট আছে, তা কাজে লাগাতে হবে।”

জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পেলে তিনি কখনো হাতছাড়া করতে চান না বলে জানান।

“আমি সুযোগ পেলে কি আর হাতছাড়া করব নাকি? আমি মনে করি পর্যাপ্ত অবকাঠামো পেলে, সুযোগ পেলে তরুণরা ভালো কিছু করে দেখাবে। তারা আর কখনো বিদেশে গিয়ে কাজ করতে চাইবে না। আমার মতো তরুণরা আর প্রবাসী হবে না।”

তরুণ নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তরুণদের প্রথমেই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। সেটা হোক এক বা দেড় মিনিট দৈর্ঘ্যের।

অস্কারজয়ী সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ নাফিস বিন জাফর। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“প্রথমে কিন্তু খুব কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ না করে হাল ছাড়া যাবে না। সিনেমা মানে একটা টিম ওয়ার্ক। সেই টিম ওয়ার্কের সঙ্গে সিনেমার সবগুলো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। আমি নিজেও সবসময় দল বেঁধে কাজ করি। মনে হয় প্রতিদিন নতুন কিছু শিখছি।

“তরুণদের বলব শুরুতে একটা দুটো ছবি বানিয়ে এক্সপেরিয়েন্স নাও। বিগ প্রজেক্টের জন্য অপেক্ষা কর।”

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র খুব একটা না দেখলেও সিনেমার গল্পগুলো তিনি শোনেন আর সেসব তাকে মুগ্ধও করে।

“বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি হল গল্প। গল্পগুলো জীবনের, সেই গল্পের গাঁথুনি চমৎকার। আমি মুগ্ধ হই। এসব গল্প নিয়ে তরুণরা তো ভালো কাজ করতে পারে, নির্মাণ করতে পারে অ্যানিমেটেড ফিল্মও।”

নাফিস জানান, শিগগিরই একটি অ্যানিমেটেড-অ্যাকশন চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করবেন তিনি। পাইপলাইনে রয়েছে আরো বেশকটি চলচ্চিত্র। তবে সে প্রসঙ্গে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তিনি।

হলিউডের ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: অ্যাট ওয়ার্ল্ডস এন্ড’ চলচ্চিত্রে ‘ফ্লুইড’ অ্যানিমেশনের জন্য ২০০৭ সালে সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে অস্কার জেতেন নাফিস।

ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ডেভলপার কোম্পানি ‘ডিজিটাল ডোমেইন’ এর দুই সহকর্মী ডাগ রোবেল ও রিয়ো সাকাগুচির সঙ্গে পুরস্কারটি জেতেন তিনি।

সাউথ ক্যারোলিনার ‘কলেজ অফ চারলেস্টন’ এর গ্র্যাজুয়েট নাফিজ নাসার জন্য একটি প্রোগ্রাম বানানোর মধ্য দিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন। ১৯৯৮ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে গ্রাজুয়েশন শেষ করে যোগ দেন ডিজিটাল ডোমেইনে।

২০০৩ সালে অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘পিটারপ্যান’ - এ স্পেশাল ইফেক্ট তৈরির মধ্যে দিয়ে হলিউডে কাজ শুরু করেন।

তিনি আবিষ্কার করেন ‘ফ্লুইড সিম্যুলেশন’ নামে একটা অ্যানিমেশন টুলের, যার ব্যবহারে পানি, আগুন কিংবা ধোঁয়ায় সৃষ্ট অ্যানিমেশনগুলো জীবন্ত মনে হবে।

২০১৫ সালে ডেস্ট্রাকশন সিম্যুলেশন সিস্টেম’ এর জন্য একটি বিশেষ গ্রাফিক্স টুল আবিষ্কারের জন্য তিনি আবারো অস্কারের ‘টেকনিক্যাল অ্যাচিভমেন্ট’ অ্যাওয়ার্ড পান।

নাফিস পরে স্টিভেন স্পিলবার্গের প্রতিষ্ঠান ড্রিমওয়ার্ক অ্যানিমেশনে কিছুদিন কাজ করেন।

এরপর ‘শ্রেক ফরেভার আফটার’, ‘মেগামাইন্ড’, ‘কুংফু পান্ডা-২’,  ‘পুস ইন বুটস’, ‘মাদাগাসকার-থ্রি’, ‘থি ক্রডস’- সিনেমাগুলোতেও প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ‘ট্রন’ আর ‘ট্রান্সফর্মার্স-টু’ চলচ্চিত্রের জন্য অ্যানিমেটেড টুলস নির্মাণ করেন।