‘একটু বেশি শীতের’ পূর্বাভাস

ঘূর্ণিঝড়, অতি ভারি বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধসের পর চলতি বছর বাংলাদেশে শীতের তীব্রতাও গতবছরের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2017, 04:18 PM
Updated : 4 Dec 2017, 04:18 PM

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেল বছর তো তেমন শীত পড়েনি। পৌষের মাঝামাঝি সময়েও শীতের তীব্রতা ছিল না। এবার ভারতেও শীত বাড়বে; এর প্রভাব দেশেও থাকবে। গেল বছরের চেয়ে একটু বেশিই শীত পড়তে পারে।”

হেমন্তের শেষে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় হিম হিম আমেজ শীতের আগমনী বার্তা দিচ্ছে।

সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে- ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ বছর আবহাওয়ার আচরণ ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় আলাদা। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অস্বাভাবিক মাত্রায় বজ্রপাত, অতি ভারি বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং ৩৩ জেলায় বন্যা, ভূমিধসের মত একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের মৌসুম ধরা হয়। এ সময় শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা এবং অন্যান্য স্থানে হালকা থেকে মাঝারি  কুয়াশা থাকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পঞ্জিকার খাতা ধরে ডিসেম্বরের শেষার্ধেই এবার শীত বাড়তে থাকবে। মাসের প্রথমার্ধে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি থাকলেও মাসের শেষভাগে তা কমে আসবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়সাস) শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, নিকট অতীতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে শীতের প্রকোপ ছিল বেশি। ওই বছর জানুয়ারির শুরুতেই তিন দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় দেশজুড়ে। সে সময় চার দশকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড হয়।

ওই বছর ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরের তাপমাত্রা নেমে আসে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা ১৯৬৮ সালের পর সর্বনিম্ন। সেদিন ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা রাজধানীতে ১৯৬৪ সালের পর সর্বনিম্ন।

১৯৬৮ সালে শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অগ্রহায়ণের শেষে এসে ২০১৬ সালে ১৩ ডিসেম্বরে দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত‌্যপ্রবাহ বয়ে যায়। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু জায়গায় এবং যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে ওই  শৈত‌্যপ্রবাহে তাপমাত্রা ছিল ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

গত বছর শীত ঋতু যথাসময়ে এলেও জেড বায়ুর দর্বলতা, ঘূর্ণিঝড় নাদার প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে শীত তেমন তীব্র হয়নি। ডিসেম্বরের গড় তাপমাত্রা ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ডিসেম্বরের শুরুতে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এলেও তা দীর্ঘায়িত হয়নি।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, “গেল বছর কম ছিল বলেই এবার তুলনামূলকভাবে একটু বেশি শীত অনুভূত হবে। তবে দীর্ঘায়িত হবে এমন নয়। ১৫ ডিসেম্বরের পরে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও প্রকোপ থাকবে এবার।”

জানুয়ারির দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এ সময় অন্যান্য জায়গায় এক থেকে দুটি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে সার্বিকভাবে জানুয়ারি মাসের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়সি বেশি থাকতে পারে।