কোচিং বাণিজ্য: ঢাকার আট স্কুলের ৯৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ

বছরের পর বছর ধরে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থেকে ‘কোচিং বাণিজ্যের’ মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে রাজধানীর আট প্রতিষ্ঠানের ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2017, 07:37 AM
Updated : 4 Dec 2017, 08:27 AM

কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান, পরিচালনা পর্ষদ এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ওই সুপারিশ জানিয়ে আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে।

দুদক সচিব মো. শামসুল আরেফিনের স্বাক্ষরে রোববার মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এমপিওভুক্ত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭২ জন শিক্ষক এবং সরকারি চারটি বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত বলে দুদক প্রমাণ পেয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ জন, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ জন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন এবং গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৮ জন শিক্ষক।

দুদক বলছে, দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থেকে এই শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়েছেন এবং ‘অনৈতিকভাবে’ অর্থ উপার্জন করে আসছেন।

তাদের বিরুদ্ধে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারকে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে বলেছে দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশন

চিঠিতে বলা হয়েছে, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে এই শিক্ষকদের এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে, এক শাখা থেকে অন্য শাখায়, দিবা শিফট থেকে প্রভাতী শিফটে বা প্রভাতী শিফট হতে দিবা শিফটে নির্দিষ্ট সময় পর পর বদলি করা যেতে পারে।

এর আগে নভেম্বরের শুরুতেও ২৪টি সরকারি বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষককে একই কারণে বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক।

সে সময় কমিশনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই শিক্ষকরা ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত এক বিদ্যালয়েই রয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক।

দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল তাদের অনুসন্ধান শেষে ওই প্রতিবেদন দেয়।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এক কর্মস্থলে শিক্ষকদের তিন বছর হলেই তাদের বদলি করার নির্দেশনা থাকলেও রাজনৈতিক চাপ, তদবির ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অনেকের বদলি আটকে থাকে বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।

সেখানে বলা হয়, কিছু শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন।