‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ ঘোষণার দাবি সেক্টর কমান্ডারদের

মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় বীর উপাধি’ প্রদান করে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2017, 07:57 AM
Updated : 1 Dec 2017, 07:57 AM

শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভা থেকে এ দাবি জানান তারা।

একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ মুক্তিযুদ্ধের সব স্থাপনা এলাকায় তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ণের দাবির কথাও তুলে ধরেন সেক্টর কমান্ডাররা।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের মন্ত্রিত্ব দেয়। তখন তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা শোভা পেলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা।

ওই সময় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’। ২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি পল্টনে এক মহাসমাবেশ করার পর ওই বছর থেকেই সারা দেশে ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে ফোরাম।

শুক্রবার সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আলোচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ, ভাইস চেয়ারম্যান আবু ওসমান চৌধুরী, মহাসচিব হারুন হাবীবসহ ফোরামের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফোরামের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী ২০ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিগুলোর মধ্যে পহেলা ডিসেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পাকিস্তানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার দাবি জানায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম।

তৎকালীন প্রশাসন ও সেনা সদস্যদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচারর সম্মুখীন করা, পাকিস্তানের কাছে পাওনা অর্থ আদায় করারও দাবি জানান তারা।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাজনীতিতে তাদের পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্মের অধিকার রহিত করতে আইন প্রণয়ণের দাবিও জানিয়েছেন সেক্টর কমান্ডররা।

জাতীয় নীতিমালার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ণের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এই তালিকা প্রণয়ন করে মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় সম্মান, অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ণে মন্ত্রী ও সাংসদদের অন্তর্ভুক্তি চায় না সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম।

দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা প্রদান করা, মৃত্যুর পর ‘বিশেষ ফান্ডের’ মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা প্রদান ও মুক্তিযোদ্ধাদের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের বিশেষ ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানের দাবিও জানানো হয়।

সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের নেতা বদল, রেডিও-টেলিভিশনের ভাষ্য বদলকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। ইতিহাস বিকৃতি রোধে কঠোর শাস্তি প্রদানের বিধান সম্বলিত ‘বিশেষ আইন’ প্রণয়ণের দাবি জানায় ফোরাম।

দেশের সবকটি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে সেগুলো স্থানীয় শহীদদের নামে নামাঙ্কিত করার দাবি জানান তারা।

মুক্তিযুদ্ধে ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের এখনও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে না। তাদেরকে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে, কিছু আয়োজনে অতিথি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্মান জানানোর যথাযথ উপায় নয়।

“তের বছর ধরে আমরা পহেলা ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু এখনো দাবি আদায় হয়নি। তবে আমরাও ছেড়ে দেবার নই।”

পরে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্যরা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুলে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।