বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীরা পিছিয়ে: বার্নিকাট

সরকার প্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার নারী হলেও বাং লাদেশে এখনও রাজনৈতিক দলে ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীরা পিছিয়ে বলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের পর্যবেক্ষণ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2017, 12:52 PM
Updated : 28 Nov 2017, 12:58 PM

মঙ্গলবার ঢাকায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এই নারী কূটনীতিক নিজের এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ নারীর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করে বার্নিকাট বলেন, উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং বেশ কয়েকজন নারী গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও নারীরা রাজনৈতিক দলে ও নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে রয়েছে।

নির্বাচনী ব্যবস্থায় নারীদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ বিভিন্ন কারণে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রতিবন্ধকতামূলক সামাজিক ও ধর্মীয় প্রত্যাশা, লিঙ্গভিত্তিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণেই নারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে তার মত।

গোলটেবিলে মূল বক্তা সিইসি নূরুল হুদা বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে চাপ দিয়ে যাবে ইসি।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে নারীদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। স্থানীয় সরকারেও নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কাজেই পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে।

“জাতীয় নির্বাচনে নারীর মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্বাচন ইসির  হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। তবে দলে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে চাপ প্রয়োগ করতে পারি।”

২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত দলগুলোয় সব কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচনী আইনে। তবে দলগুলো এখনও এই শর্ত পূরণে পিছিয়ে  আছে।

লেইক শোর হোটেলে এই আলোচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ অংশ নেন।

দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের একসঙ্গে পাওয়াকে ‘দারুণ ব্যাপার’ বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, “আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এটাই আশা করি। শুধু রাজনৈতিক দলের নেতারা নন, আমরা আশা করি, সব স্তরের নাগরিকরা একসঙ্গে এসে সমস্যা সমাধান করবে।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতপার্থক্যের অবসান এখনও হয়নি।

এই মতপার্থক্য থেকে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে ভোট ঠেকাতে নেমেছিল বিএনপি; তখন সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে।

বার্নিকাট বলেন, “গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। যখন নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকবে, স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ হবে, ভোটারদের কাছেও এর ফলাফল অনেক বেশি আস্থার হবে।”

গণতন্ত্র যে শুধু ব্যালট বাক্সে ভোট দেওয়া নয়, তা সবাইকে মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, নাগরিকেদের স্বাধীনভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাতে দেওয়া উচিৎ। কোনো ধরনের ভয়, ঘর বা চাকরি হারানোর শঙ্কা ছাড়া ভোটের নিবন্ধন করতে পারা ও বৈধ নির্বাচনের ফলাফলকে শ্রদ্ধা করতে পারা উচিৎ।