নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালি ক্যাম্প পরিদর্শন করে সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তাদের মিয়ানমারে ফেরার ব্যবস্থা করা হবে।

সাজিদুল হক কক্সবাজার থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2017, 12:07 PM
Updated : 26 Nov 2017, 01:31 PM

রোববার বিকালে রাষ্ট্রপতি বালুখালি ক্যাম্পের পরিস্থিতি দেখেন এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।

আবার মিয়ানমারে ফিরে গেলে পরিবারের মৃত বা আহত সদস্যদের মত নির্যাতনের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কার কথা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।

রাষ্ট্রপতি হামিদ তাদের বলেন, “কেবল বাংলাদেশ না, সমগ্র বিশ্ব রোহিঙ্গাদের পাশে আছে। আপনারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ফেরত যেতে পারেন এবং নিরাপত্তার সঙ্গে নিজ দেশে বসবাস করতে পারেন, তা নিশ্চিত করে আপনাদের ফেরত পাঠানো হবে।”

ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এই রোহিঙ্গারা একটা বার্ডেন। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। সাধ্যমত তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

“এখন চুক্তি হয়েছে; তারা যাতে নিজ দেশে সম্মানের সাথে ফিরতে পারে সেটা নিশ্চিত করা হবে। কারণ এখানে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে।”

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। আর গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর আরও সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

তাদের ফেরার পথ তৈরি করতে বৃহস্পতিবার নেপিদোতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে একটি সম্মতিপত্রে (অ্যারেঞ্জমেন্ট) সই করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং এজন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সম্মতিপত্রে।

আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আপাতত কেবল গত বছরের অক্টোবর ও তার পরে আসা রোহিঙ্গাদেরই ফেরত নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।

এই চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে কতটা আশাবাদী- এ প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “আলোচনাতো শুরু হল। আলোচনা হলে ইমপ্রুভমেন্ট হবে।”

আরবের হুদায়বিয়া চুক্তির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই চুক্তি শুরুতে অপমানজনক মনে হলেও পরে সেটা ‘উপকারী’ হয়েছিল।

তিনি বলেন, “তারা আত্মমর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের সাথে আছে।”

এর আগে রাষ্ট্রপতি বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কেন্দ্র ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন হোসেন চৌধুরী মায়া এ সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রমের সার্বিক বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন।

নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদসহ সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। সোমবার কক্সবাজারে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়ামের ‘মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সসারসাইজ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।