এবার শুধু ২০১৬ থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার

দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে গত বছরের অক্টোবর ও তার পরে আসা নাগরিকদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2017, 09:34 AM
Updated : 25 Nov 2017, 11:55 AM

মিয়ানমার সফর করে দেশটির সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি সম্মতিপত্র সই করে এসে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, “স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার গত ৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ এর পরে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের ফেরত নিবে।

“এই চুক্তির অধীনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর ৯ অক্টোবর ২০১৬ এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।”

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৯ অক্টোবর সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর এবার ২৫ অগাস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতিগত দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম।

বাংলাদেশের আহ্বানে ১৯৯২ সালে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলেও পরে আর সেই প্রক্রিয়া এগোয়নি।

ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালের আগে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনার কথা নতুন সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

২০১৬ সালে আসা একদল রোহিঙ্গা

এবার আসা রোহিঙ্গারা

এবার গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো দমন-পীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আলোচনায় সম্মত হয় মিয়ানমার।

বাংলাদেশ এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করে নতুন চুক্তির কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালের চুক্তির অনুসরণেই সম্মতিপত্র হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের ফেরানোয় সাফল্য নিয়ে সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলের।

এ অবস্থায় সেই চুক্তির অনুসরণে কেন চুক্তি হল- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, “মিয়ানমার ওই চুক্তি অনুসরণ করতে চায় বলে সেভাবেই করা হয়েছে।

সেনা অভিযানে জ্বালিয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা পাড়া- ছবি: রয়টার্স

“গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। এর খুঁটিনাটি, ত্রুটি-বিচ্যুতি, এটা-ওটা নেই, কেন নেই, কী হবে- এসব কথা বলে তো কোনো লাভ নেই।

“গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল, রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নিতে চেয়েছে। লোকগুলোর সেখানে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, সেটারও কাজ শুরু হয়েছে।”

প্রত্যাবাসনের জন্য আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন এবং ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ চূড়ান্ত করা হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এই চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পর তাদের আগের আবাসস্থল বা তাদের পছন্দ অনুযায়ী কাছাকাছি কোনো স্থানে পুনর্বাসিত করা হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থল/ব্যবস্থায় সীমিত সময়ের জন্য রাখা হবে।

এই প্রক্রিয়ায় চীন ও ভারতের সহযোগিতা নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশ দুটির সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে বলে জানান মাহমুদ আলী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ের সম্মতিপত্র বিনিময় (ফাইল ছবি)

সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে জানালেও কবে নাগাদ শেষ করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় চুক্তিতে নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান মন্ত্রী।

তার ভাষ্য, ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে’ প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে দুইপক্ষ সম্মত হয়েছে।

‘যৌক্তিক সময়ের’ ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটার শেষ তো দেওয়া যায় না। শোনেন, এটা প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপারটা হল যে, এই রকম কোনো টাইম ফ্রেম দিয়ে লাভও নাই।”

এই সফরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন মাহমুদ আলী।

নাফ নদীর স্থায়ী সীমানা নির্ধারণের উপর ২০০৭ সালে চূড়ান্ত করা একটি প্রটোকল এই সফরে সই হয় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত নাফ নদীর উত্তরে স্থলভাগের সীমানা নির্ধারণ চুক্তির ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব রেটিফিকেশন’ও বিনিময় হয়।

এছাড়া রাখাইন রাজ্যের জন্য বাংলাদেশের উপহার হিসেবে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স মিয়ানমারের সমাজসেবা, ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন মাহমুদ আলী।