সুইমিং পুল রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন ৮ কর্মকর্তা

বঙ্গভবনের সুইমিং পুলটি চালু হওয়ার পর তার রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে ইউরোপের তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আটজন কর্মকর্তা; যাকে সরকারি ‘অর্থের অপচয়’ বলে মনে করছেন একজন স্থপতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2017, 09:07 AM
Updated : 25 Nov 2017, 09:07 AM

বঙ্গভবনের রেসিডেন্স ব্লকের যে সুইমিং পুলের জন্য প্রশিক্ষণের জন্য কর্মকর্তারা  এক সপ্তাহের জন্য জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন, তা চলতি মাসের ১২ তারিখ উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

আট কর্মকর্তার সফরের সরকারি আদেশ (জিও) গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জারি করেছে ১৪ নভেম্বর। ওই জিও’র (সরকারি আদেশ) একটি অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।

যারা সফরে যাচ্ছেন, তারা হলেন- গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান সামসুল করিম ভূইয়া, বঙ্গভবনে সংযুক্ত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা কমান্ডার মিনহাজ আলম, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুরাইয়া বেগম, গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান স্থপতি মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন দিদার এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব দিলওয়ারা আলো।

জিও থেকে জানা যায়, ‘কনস্ট্রাকশন অব সুইমিং পুল অ্যান্ড আদার রিলেভেন্ট সার্ভিসেস ইন দ্য প্রিমিসেস অব বঙ্গভবন’ প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ব্যয় বহন করা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুইমিংপুল রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য তাদের এই সফর।

সফরের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “যেসব সিস্টেম এখানে রাখা হয়েছে, সেগুলো আমাদের দেশে নতুন। এগুলো কীভাবে অপারেট করবে, তা আমরা জানি না। এজন্য বিভিন্ন দেশের সুইমিং পুল কীভাবে অপারেট করে, সেটা জানতে হবে। না হলে এটা ডিসঅর্ডার হয়ে যাবে।”

এই নকশায় হয়েছে বঙ্গভবনের সুইমিং পুল কমপ্লেক্সটি

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চলতি মাসেই এই সফর হওয়ার কথা ছিল। ভিসা সংক্রান্ত কাজে কিছু দেরি হওয়ায় সফর ডিসেম্বর মাসে হতে পারে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের সফর অর্থের অপচয়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুইমিংপুল কোথায় করা হচ্ছে, মাটিতে নাকি ওপরে সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সুইমিং পুলের নকশা হয়ে থাকে। আমাদের এখানে ধুলো বেশি। সেইসাথে অন্যান্য বায়ুবাহিত আবর্জনা থাকে।

“বলাই বাহুল্য এসব দেশ পরিদর্শন করার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে আধুনিক মানের সুইমিং পুল রয়েছে। এধরনের কাজে ওই পেশাজীবীদের যুক্ততা থাকলেই যথেষ্ট। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনা যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “এসব কর্মকর্তাদের বিদেশ গিয়ে কী হবে? যারা যাচ্ছেন, তারা এটার নকশা করেন নাই, বিশেষায়িত কাজে ভূমিকাও রাখতে পারবেন না।

“দেখে এসেছি, ভালো লেগেছে- এধরনের কথা বলা ছাড়া আর কিইবা করতে পারবেন তারা। এধরণের সফরে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোন উপকার হবে না।”

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সুইমিং পুলটি তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেকনিক কর্পোরেশন; বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টুডিও ইকোটেকচার লিমিটেড এই প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে।

বঙ্গভবনের সুইমিং পুলের নকশা

বিদেশ সফরের জন্য গত ১৩ অগাস্ট রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগ থেকে গণপূর্ত সচিবকে বঙ্গভবনের দুই কর্মকর্তার নামের তালিকা পাঠানো হয়। ওই চিঠির স্বাক্ষরকারী দিলওয়ারা আলো তার নিজের এবং কমান্ডার মিনহাজ আলমের নাম বঙ্গভবনের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান।

চিঠিতে বঙ্গভবন গণপূর্ত উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে বিদেশ সফরের তালিকায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।

সেখানে বলা হয়, মিজানুর রহমান শুরু থেকে সুইমিং পুল নির্মাণ প্রকল্পের সার্বক্ষণিক তদারক করছেন।

প্রতিনিধি দলে তার নামটিও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয় তা বিবেচনায় নেয়নি।

ইকবাল হাবিব বলেন, “এসব প্রকল্পের ডিজাইন করে একদল, নির্মাণ করে আরেকদল, আর ঘুরতে যায় আরেক দল। এটা অসামঞ্জস্যকর, অর্থ অপচয়ের প্রক্রিয়া মাত্র।”

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই সুইমিং পুলের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন রাষ্ট্রপতি, গত ১২ নভেম্বর হয় উদ্বোধন।

সুইমিং পুলটিতে জ্যাকুজি, স্টিমবাথের ব্যবস্থা এবং শিশুদের জন্য ওয়েডিংপুলের ব্যবস্থা রয়েছে। মূল সুইমিংপুলটির ব্যাসার্ধ ২৩ দশমিক ৭৫ মিটার। বিভিন্ন পর্যায়ে গভীরতা ছয় থেকে আট ফুট।