জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও মনে করছেন, বিদ্যুতের দাম যে পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে- তা খুব বেশি নয়।
শুক্রবার সকালে বিদ্যুৎ ভবনে সেক্টর লিডারদের দুইদিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এমন মন্তব্য করেন তারা।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, “বিদ্যুতের যে দাম বাড়ানো হয়েছে, আমি মনে করি এটি খুবই সামান্য এবং মামুলি ব্যাপার; জনজীবনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। দাম বৃদ্ধির কাজটি বিইআরসি নিজস্ব বিবেচনা থেকে বাড়িয়েছে, এক্ষেত্রে আমাদের কোনো প্রভাব নেই।”
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়, যা আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সমালোচনা এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে। এর প্রতিবাদে বাম দলগুলো ৩০ নভেম্বর হরতালও ডেকেছে।
এদিকে দাম বাড়ানোর পরও সরকারকে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে বলে জানান তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী।
“গ্রামে-গঞ্জে লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিল বাড়েনি। নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের বিল সামান্য বেড়েছে। মিনিমাম চার্জ একটা নেওয়া হত, সেটাকে রহিত করা হয়েছে। সামঞ্জস্যকরণ করা হয়েছে। মামুল একটু বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
দাম বাড়ানো নিয়ে কেউ কোনো রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক খেলায় মেতে না উঠলে সব ঠিক থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন জ্বালানি উপদেষ্টা।
বিইআরসির কাছে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “এখন বিদ্যুতের যে দাম বৃদ্ধি হয়েছে তা গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হবে না। তাহলে এটি খুব বেশি কিছু নয়। তবুও হয়ত কিছুটা অ্যাফেক্ট পড়বে গ্রাহক পর্যায়ে। আমি মনে করি এটি সহনীয়।”
নতুন হারে আবাসিকে মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ১৫ টাকা, ১৫০ ইউনিটে ৪৮ টাকা, ২৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৯০ টাকা, ৪৫০ ইউনিট পর্যন্ত ১৯৬ টাকা এবং ১০০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ৬০৪ টাকা।
তবে ন্যূনতম বিল তুলে দেওয়ায় কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ কমবে। ১৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাঁচবে ১৭ থেকে ২২ টাকা।
দাম বাড়ানো হয়েছে কেবল খুচরা পর্যায়ে; পাইকারিতে বিতরণ কেন্দ্রগুলোর জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না।
তিনি বলেন, “যেকোনো ধরনের এডজাস্টমেন্টেই কিছুটা প্রভাব থাকে। কিন্তু সেটা সহনীয় কিনা সেটা হল প্রশ্ন। বার্ক (বিইআরসি) সব যুক্তি তর্ক শুনে মনে করছে যে এটা এফর্ডেবল। এখানে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
“আমি মনে করি এডজাস্টমেন্টটা আমাদের দরকার ছিল। তারা যেটা করেছে, আমার মনে হয় এটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।”
নয় বছর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর এ পর্যন্ত আট বার বাড়ানো হল বিদ্যুতের দাম।
এবার বিদ্যুতে দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির যে গণশুনানি হয়, তাতে দাম বাড়ানোর বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে উল্টো দাম কমানো সম্ভব বলে দেখিয়েছিল ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব।
কয়েকটি ধাপে ব্যয় সাশ্রয় করে ইউনিট প্রতি ৫৫ পয়সা দাম কমানোর সম্ভব বলে স্বীকারও করেছিল বিদ্যুতের একক ক্রেতা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-পিডিবি।
তারপরও দাম বাড়ানোয় ক্যাব বলছে, এখন দাম বাড়ানোয় গণশুনানি ‘অর্থহীন’ বলে প্রমাণিত হল।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “আমাদের প্রস্তাবের ওপর একটা ইনটেনসিভ আলোচনা হয়েছে। আমাদেরকেও প্লান্টগুলোতে আরও সাশ্রয়ী হতে হবে। শুনানিতে সেটা উঠে এসেছে।
“আমরা চেয়েছি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ওপর যেন কোনো প্রেসার না পড়ে; সেই দিকে খেয়াল করেছি আমরা।”