এতিমখানা দুর্নীতি: তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন খালেদার

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে ষষ্ঠ দিনের বক্তব্যে তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের দুদকে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2017, 02:19 PM
Updated : 23 Nov 2017, 02:19 PM

তার নিয়োগ ‘অবৈধ’ দাবি করে খালেদা বলেছেন, “অবৈধ নিয়োগ হওয়ার ফলে তিনি সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে, তাদের নির্দেশনা অনুসারে মামলার অনুসন্ধান ও তদন্ত করে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।”

ঢাকার বকশীবাজারে বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন খালেদা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার এ বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থন করতে এসে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ দিয়ে বিএনপিনেত্রী ‘সময়ক্ষেপণ’ করছেন।

ষষ্ঠ দিনেও আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদার বক্তব্য শেষ হয়নি। তার আবেদনে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন গত ১৯ অক্টোবর।

সেদিন তিনি দাবি করেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে এতিমদের জন্য আসা একটি টাকাও তছরুপ বা অপচয় করা হয়নি, তা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। এরপর ২৬ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থনের দ্বিতীয় দিনে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এ মামলা ‘ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

২ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনে খালেদা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে ‘সরাতে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করছে ক্ষমতাসীনরা।

১১ নভেম্বর তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিচারকরা স্বাধীনভাবে আইন মেনে বিচার করতে পারেন কি না, তার এ মামলার রায়েই তার প্রমাণ আসবে। আর দেশে বিচার ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবেন কি না- তা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন ১৬ নভেম্বর।

বৃহস্পতিবার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৯৭৯ সালে সহকারী পদে ‘প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের পর বিভিন্ন কৌশলে’ ১৯৮৫ সালে সহকারী পরিদর্শক এবং ১৯৯২ সালে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান।

“এরপর ২০০৫ সালে বিএনপি ও চার দলীয় জোটের শাসনামলে তাকে আত্মীকরণ না করে অযোগ্য হিসাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সে অব্যাহতি আদেশের বিরুদ্ধে এই সাক্ষী হাই কোর্টে রিট আবেদন করে হেরে যান। সে আদেশের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। অদৃষ্ট ইশারায় সে আপিল প্রত্যাহার করে নেন।

“পরবর্তীতে ২০০৮ সালের দিকে তাকে আবার দুদকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের মাত্র দুদিন পর এ মামলা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।”

খালেদা জিয়া বলেন, মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময়ের মধ্যে তাকে সহকারী পরিচালক করা হয়। আর অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১২ সালে ‘পুরস্কার হিসেবে’ আবারও পদোন্নতি দিয়ে উপ-পরিচালক করা হয়।

“২০০৫ সালে চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে তিনি আমাদের উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন বলে আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়। ফলে এই সাক্ষী বিরাগের বশবর্তী হয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।”

এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ‘অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেন’ দাবি করে খালেদা বলেন, “তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

তিনি দাবি করেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

খালেদার বক্তব্য শেষে হলে দুদকের আইনজীবী কাজল আদালতে বলেন, “আসামি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষীকে আক্রমণ করা হয়েছে। এটা একজন ব্যক্তির করা মামলা নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠানের মামলা।

“তার চাকরি ও বক্তিজীবন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন তিনি। আমি মনে করি না, ৩৪২ ধারা মতে এসব বক্তব্য কার্যকর হবে।”

এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “৩৪২ ধারার উপর যুক্তিতর্ক তুলে ধরা যায় না। এটি কেবল আদালত এবং আসামির বিষয়। এ ধারার উপর যুক্তিতর্কের সময় আসেনি। এটি একটি রাজনৈতিক মামলা।”

পরে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের বাকি বক্তব্য শোনার জন্য ৩০ নভেম্বর দিন রাখেন বিচারক।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।