পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে আসিনি: হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো স্বীকৃতি নয়, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনই তার কাছে বড় পাওয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 01:30 PM
Updated : 22 Nov 2017, 01:37 PM

বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, মৃত্যুকে ‘হাতের মুঠোয়’ নিয়ে, জীবন বাজি রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন। তার কাজের সময়ও সুনির্দিষ্ট নয়, যখনই দরকার হয় কাজ করে যান। কোনো কোনো রাতে তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর সুযোগ পাননি।

অখ্যাত একটি অনলাইন পোর্টালের এক প্রতিবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ওই প্রশ্ন করেছিলেন জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম।

অপরিচিত একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওই পোর্টালটি লিখেছে, বিশ্বের সৎ ও পরিচ্ছন্ন সরকার প্রধানের তালিকায় তিন নম্বরে শেখ হাসিনাকে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বের চতুর্থ কর্মঠ সরকার প্রধান বলা হয়েছে।

এ নিয়ে অনুভূতি জানতে চেয়েছিলেন ফখরুল ইমাম।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার অনুভূতি এটাই, কী পেলাম, কী পেলাম না- সে হিসাব মেলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে রিকগনাইজ করল, করল না- সে হিসাব আমার নাই।

“একটাই হিসাব- এই বাংলাদেশের মানুষ, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কিছু কাজ করতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে বড়।”

তালিকায় তার আগে অন্য যে সব দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান আছেন  সে সব দেশের জনসংখ্যা কত তা জানতে চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা যদি তারা তুলনা করতেন তাহলে হয়ত অন্য হিসাব আসত। আমাদের ছোট্ট ভূখণ্ডে বৃহৎ জনগোষ্ঠী।

“তারপরও এক দুই তিন চার নম্বরে যারা আছেন, তাদের কিন্তু জীবনে বাবা মা ভাই বোন আপনজন হারাতে হয়নি, জেলের ভাত খেতে হয়নি। আমাদের দেশের পরিবেশটাই আলাদা। যত ভালো কাজ করি মিথ্যা মামলা জেল জুলুম বারবার মৃত্যুমুখী হওয়া। এখানে একজনও নেই আমার মতো গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছে। হত্যার হুমকিও পায়নি। বার বার আমার উপর যে আঘাত এসেছে এ রকম একবারও যদি হত তারা ঘরে বসে থাকত।”

দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে নিজের জীবনে অর্থ সম্পদ টাকা পয়সা, কি আছে না আছে চিন্তাও করি না। ওটা নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা নাই। কারণ আল্লাহ জীবন দিয়েছে, জীবনতো চলেই যাবে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রায় ছয় বছর শরণার্থী হিসাবে দেশের বাইরে থাকার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যাদের সাথে তুলনা তাদের এই অভিজ্ঞতাও নেই। যারা করেছেন তারা যদি এ বিষয়গুলোও বিবেচনা করতেন তাহলে হয়ত রেজাল্ট অন্য রকম হতে পারত। এটাও ঠিক।

“আমাদের যে প্রতিকূল অবস্থা এ প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের চলতে হয়নি।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সেনাশাসনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কখনও ধারাবাহিক গণতন্ত্র ছিল না।

“প্রতিবারই বাধা এসেছে, আমাদের  আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে।”

নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, “১৪ ঘণ্টা ১২ ঘণ্টা এসব হিসাব নাই। এমনও দিন যায় রাতে তিন ঘণ্টা সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারিনি। তাও পারি কি না সন্দেহ। যখনই কাজ আসে আমরা করে যাই।

“কেন করি? করি আমি মনের টানে। আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে দিয়েছেন। তার একটা স্বপ্ন ছিল, ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়বেন।”

বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

ফখরুল ইমাম তার প্রশ্নে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কিছু অভিযোগ আছে। তা না হলে শেখ হাসিনা সৎ ও পরিছন্ন সরকার প্রধান হিসাবে আরও এগিয়ে যেতেন।

জবাবে এ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “যে দেশে মিলিটারি ডিকটেটরশিপ চলে, গণতন্ত্রের অভাব থাকে যে দেশে, স্বচ্ছতা জবাবদিহির অভাব থাকে, সেদেশে দুর্নীতির শিকড় গেড়ে যায়। সে শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়। ‘৭৫ এর পর থেকে ২৫ বছর আমাদের দেশে এই অবস্থা বিরাজমান ছিল।

“আমার লিগ্যাসি কী? উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি ডিকটেটরশিপ, মিলিটারি রুল, অবিচার, অত্যাচার। যার কারণে এখনও দুর্নামের ভাগিদার হতে হচ্ছে। আমি নিজে সততার সাথে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি।”

দেশে এখন ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি নেই দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, “মাথায় পঁচন ধরলে সবখানেই পচন ধরে। যেহেতু মাথায় পচন নাই, শরীরের কোথাও একটু আধটু ঘা টা থাকে, সেগুলো আমরা সেরে ফেলতে পারব।

“ওই রকম যদি দুর্নীতি হত জিডিপি ৭ দশমিক ২৮ ভাগ হত না, মাথাপিছু আয় এক হাজার ৬১০ ডলারে হত না।”

তিনি বলেন, “নিজের জীবনটাও বাজি রেখেছি, শুধু একটাই কারণ। বাংলাদেশটা যেন স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে উন্নত সমৃদ্ধ হয় বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলে।”