‘খুচরা জিনিস’ নিয়ে কেন সময় কাটানো: আদালতকে প্রধানমন্ত্রী

জরুরি মামলার বদলে ‘খুচরা বিষয়’ নিয়ে আদালতের সময়ক্ষেপণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2017, 04:37 PM
Updated : 21 Nov 2017, 04:46 PM

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে একটি রিট আবেদনের সূত্র ধরে মঙ্গলবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া আসে।

পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নানা বক্তব্য এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর বিচারাঙ্গন নিয়ে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন।

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিচারপতি সিনহার বিদায়ের পর এই প্রথম আদালত নিয়ে মন্তব্য এল শেখ হাসিনার।

তিনি বলেন, “লাখ লাখ মামলা পড়ে আছে কোর্টে। তার কোনো খবর নেই। কিন্তু বাচ্চারা পরীক্ষা দেবে কি দেবে না, তা নিয়ে একটা মামলা-রিট করে বসে থাকে।

“আর এটা নিয়েই কোর্ট সময় কাটায়, অথচ অনেক জরুরি মামলা- সন্ত্রাসী-জেএমবি গ্রেপ্তারের মামলা, অনেকের ফাঁসির শুনানি বাকি, সেগুলোর শুনানির সময় নেই। এই সমস্ত খুচরা জিনিস নিয়ে সময় কাটানো কেন?”

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রাথমিক সমাপনী এবং জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে আদালতে রিট আবেদনের প্রসঙ্গটি  তুলেছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রধানের এই বক্তব্য আসে।

পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি অনেকের

শিশুদের প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেওয়ার শিক্ষাবিদদের অনেকে আপত্তি জানানোর পর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ এক রিট আবেদনটি করেরছিলেন।

ফিরোজ রশীদ রিট নিষ্পত্তি না করে সরকারের এই পরীক্ষা নেওয়ার সমালোচনা করে কোনো ধরনের আইন প্রণয়ন ছাড়া এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বলে দাবি করেন।

তার কথার উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংসদে বলেন, সংসদে ‘পাস হওয়া’ জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকেই এই পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আইনের কোনো লঙ্ঘন ঘটেনি।

প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণি করা হলে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষাটি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব এলেও তা আটকে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়।

সংসদে আলোচনার এক পর্যায়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনাও তাতে যোগ দিয়ে আদালত নিয়ে কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, “হয়ত দেখা যাবে, কোনোদিন একটা রিট করে বসে থাকবে কেন বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে!

“বাংলাদেশে কিছু লোক যেন আছে অনবরত রিট করা আর এটার ওপর আলোচনা করা। বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে রিট নিয়ে জানি না কোর্ট কী রায় দেবে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করার রায় যদি দেয়, তাহলে এর থেকে দুঃখের আর কিছু থাকবে না।”

সংসদে শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

ফিরোজ রশীদকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “পরীক্ষাটা নিয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যের আপত্তি কিসে, তা বুঝতে পারছি না। জানি না, উনি কীভাবে পড়াশুনা করে উঠে আসছেন।

“পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষাটা আমি চালু করেছি। সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুললেন কেন পরীক্ষা হবে? এটা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। এই পরীক্ষার জন্য ছেলে মেয়েরা কি পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না? এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ছে না?”

পরীক্ষা দুটির চালুর কারণ ব্যাখ্যা করে সরকার প্রধান বলেন, “আগে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ক্লাস ফাইভ থেকে একটি স্কুল থেকে ১০/১২টি ছেলে-মেয়েকে ঠিক করা হত। শিক্ষকরাও তাদের পেছনে লেগে থাকতেন। তাদের পড়াতেন, যেন ভালোভাবে পড়াশোনা করে তারা বৃত্তি পেতে পারে। আবার ক্লাস এইটেও একই ঘটনা ঘটে। ফলাফলটা এই দাঁড়ায় যে অন্য ছেলেমেয়েদের দিকে তেমন একটা নজর দেওয়া হয় না।”

নিজের ছাত্র জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যখন আমাদের বৃত্তির জন্য সিলেক্ট করা হয়েছিল, তখন দেখতাম, যত পড়াশুনা আমাদের উপর, আর বাকিদের ছাড়া ছাড়া ভাব।

“বৃত্তির জন্য শিক্ষকরা যাদের বেছে নেন, তাদের বাইরেও মেধাবী ছেলে-মেয়ে থাকতে পারে। শিক্ষকরা সবাইকে যে বেছে নিতে পারবেন, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেই জন্য আমরা ঠিক করলাম- কয়েকটা বাছা পরীক্ষার্থীদের নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা না করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সবাই পড়াশুনা করবে, সবাই পরীক্ষা দেবে, সেখান থেকে যারা দরিদ্র-মেধাবী, তারা বৃত্তিটা পাবে।”

চলমান প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় শিশুরা

পিইসি ও জেএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি কাটিয়ে তোলার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

“স্কুলে পড়ে ১০ বছর পর যখন এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসে তখন ভয়ভীতি কাজ করে। আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়। বর্তমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা যে তারা বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে উঠে যাচ্ছে ফলে তারা এসএসসি পরীক্ষার সময় ওই ভয়ভীতিটা তাদের মধ্যে থাকে না। তখন সহজভাবে পরীক্ষার হলে বসে, পাস করে। এর ফলে এখন পাসের হার বাড়ছে।”

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকাতেও এই পরীক্ষা দুটি কার্যকর মনে করছেন সরকার প্রধান।

“স্কুলে ধরে রাখাটাও এই পরীক্ষার একটা উদ্দেশ্য। কোন শিক্ষার্থী কোন পথে যাবে এই পরীক্ষার মাধ্যমে তারও ফিল্টার করে ফেলা যাচ্ছে।”

পাশাপাশি এই দুটি পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন সনদ পায়, তাতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“এতে আপত্তিটা কী থাকতে পারে, বুঝতে পারি না। আমরা যেটা করেছি, বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই করেছি। পৃথিবীর সব দেশে এ ধরনের পরীক্ষার সিস্টেম আছে,” বলেন শেখ হাসিনা।