ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন নয়, শ্রমিক সংগঠনই থাকছে

ইউরোপে পোশাকের বাজার ধরে রাখতে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার না দিয়ে চলমান শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনের সুযোগ রেখে শ্রম আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2017, 11:31 AM
Updated : 21 Nov 2017, 12:51 PM

শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সরকারের এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

“ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন নয়, ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামেই শ্রমিক সংগঠনের কার্যক্রম চলবে।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও পোশাক কারখানা সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমমান ও শ্রমিকের অধিকার আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ না হওয়ায় কথা জানিয়ে ১০৫তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়।

ওই অনুচ্ছেদে শ্রম আইনে সংশোধনী আনা, ইপিজেড আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্যের তদন্ত এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে করতে বলা হয়েছিল।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত জুনে ১০৬তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে বাংলাদেশে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ওই সময় মন্ত্রী বিশেষ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের অগ্রগতি আইএলওর মহাপরিচালককে অবহিত করলে ওই অনুচ্ছেদটি তুলে নিয়ে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দেয় আইএলও।

তোফায়েল বলেন, “আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের বোঝাতে সক্ষম হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য বিশেষ প্যারাগ্রাফটি প্রত্যাহার হয়েছে। ওই প্যারা প্রত্যাহার হওয়ার আমাদের আর কোনো সমস্যা ছিল না কিন্তু কথা ছিল কিছুটা সংশোধন করব, সেই সংশোধনের বিষয়ে বসেছিলাম।

“সবার সাথে আলোচনা করে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। বুধবার (২২ নভেম্বর) জেনেভায় আইএলওর কমিটি অব এক্সপার্ট বসবে, আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত তাদেরকে জানিয়ে দেব। এতে করে ভবিষ্যতে আর কোনো সংকট রইল না।”

শ্রম আইনে যেসব সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর তা সাংবাদিকদের জানানো হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের স্বার্থকে সংরক্ষণ করেই আজকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

“আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমরা তাদের (আইএলও) সন্তুষ্ট করতে পারব এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের একটা বড় বাজার, আমাদের রপ্তানির সিংহভাগ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়, তারাও আমাদের এই সিদ্ধান্তে খুশি হবে। সকল মহল আমাদের সিদ্ধান্তে আকৃষ্ট হবে।”

২০১৬ সালের বিশেষ অনুচ্ছেদটি বহাল থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের অসুবিধা হত বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, বিশেষ প্যারাগ্রাফ বাতিলের পরে আইএলওর কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল ইন্টারন্যাশনাল লেবার কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইন ও বেপজা আইনের কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন করা।

“যে সমস্যাগুলো ছিল আজকে আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আলোচনা করেছি। আলাপ-আলোচনায় আমরা সন্তোষজনকভাবে একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর আপনাদের জানানো হবে।”

আনিসুল হক বলেন, “সমস্যা যেখানে ছিল আমরা ঠিক সেই সমস্যার জায়গায় গিয়ে সমস্যার সমাধানের এবং প্রতিকারের জন্য যেসব পরিবর্তন দরকার সেসব পরিবর্তন এনেছি। এবং আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেখানে পরিবর্তন করলে অসুবিধা হবে সেখানে আমরা পরিবর্তন করিনি।”

আগামী শীতকালীন অধিবেশনে শ্রম আইনের সংশোধনী বিল সংসদে যেতে পারে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

২০০৬ সালের প্রণিত শ্রম আইন এর আগে ২০১০ ও ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। আর ২০১৫ সালে জারি হয় শ্রম আইনের বিধিমালা।

ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন নয়

ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন নামে কোনো শ্রমিক সংগঠন করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “ইপিজেডে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আছে। এটা ট্রেড ইউনিয়নের মতই। ইপিজেড আইনে যা আছে সেই অনুসারেই সেখানে সব কিছু হবে।”

ইপিজেডে বিনিয়োগকারীরাও সভায় ছিলেন জানিয়ে তোফায়েল বলেন, সভার সিদ্ধান্তে সবাই খুশি, সকল মহলই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

“এখনও (ইপিজেড-এ) ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন থাকবে, সেই নামেই তারা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।”

আইনমন্ত্রী বলেন, ইপিজেডে সব সময় ট্রেড ইউনিয়ন ছিল যেটার নাম ছিল ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ওটাই থাকবে, ওটাই আছে।