শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2017, 03:56 AM
Updated : 21 Nov 2017, 07:18 AM

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ এবং সরকার প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার।

আবদুল হামিদ শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল এসময় সশস্ত্র সালাম জানায়। পরে রাষ্ট্রপতি শিখা অনির্বাণ চত্বরে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

রাষ্ট্রপতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময়, সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অফ অনার দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যখন শিখা অনির্বাণে ফুল দেন, তখন বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।

রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে ফুল দেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে গেলে সেখানে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান ও অন্যান্য পরিচালকরা তাকে স্বাগত জানান। সেখানে তিন বাহিনীর প্রধানরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

এরপর আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর উত্তরাধিকারী এবং খেতাবপ্রাপ্ত ১০১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাদের হাতে চেক ও শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া সেনাবাহিনীর দশজন, নৌ বাহিনীর একজন ও বিমান বাহিনীর একজনকে ২০১৬-১৭ বছরের জন্য শান্তিকালীন পদক এবং সেনাবাহিনীর দশজন, নৌ বাহিনীর দুইজন ও বিমান বাহিনীর দুইজনকে ২০১৬-১৭ সালের পদক তুলে দেন সরকারপ্রধান।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) তারিক আহমদ সিদ্দিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ‘কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের’ সমন্বয়ে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতা আমাদের মহান অর্জন। স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ এবং এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকার ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এর ফলে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে জনবল, স্থাপনা, আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমার বিশ্বাস এসব কর্মসূচি সশস্ত্র বাহিনীকে আরো আধুনিক, দক্ষ ও গতিশীল করবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব এবং উন্নত নৈতিকতার আদর্শে স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের প্রত্যাশার কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “পেশাগত দায়িত্বপালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দেশ গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।”

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সারাদেশে সেনা নিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা, বিমান বাহিনী ঘাঁটিসহ তিন বাহিনীর অধীনের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

ফজরের পর দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি-স্থাপনা এবং বিমান বাহিনীর ঘাঁটির মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা হয়। বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা ছাড়াও সাভার, বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা ও রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসেও সংবর্ধনার আয়োজন রয়েছে বলে আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। ঢাকায় সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা, চাঁদপুর ও বরিশালে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বেলা ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সবার পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।