নূর চৌধুরীকে ফেরাতে রাতারাতি অগ্রগতি হবে না: আইনমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এ এইচ এম বি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে রাতারাতি অগ্রগতি না হলেও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2017, 06:17 PM
Updated : 20 Nov 2017, 06:17 PM

সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নতুন কানাডার হাইকমিশনার বেনয়েট প্রিফন্টেইনের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই আশাবাদ প্রকাশ করেন।

নতুন রাষ্ট্রদূত এদিন আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন।

নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমার সাথে নিশ্চয়ই এই ব্যাপার নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে উনাদের পক্ষ থেকে কিছু সমস্যা তো আছেই, সমস্যা তিনি তুলে ধরেছেন।”

এ বিষয় নিয়ে আলাপ করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এর কারণ হচ্ছে আমি যেটা বলেছি, সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করার একটা দায়িত্ব রয়ে গেছে। সেই দায়িত্ব থেকে এই সমস্যা দূরীকরণে কথা বলে যেতে হবে।”

যতক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যা সমাধান না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কানাডার হাইকমিশনার সাথে দেখা হলেই এই সমস্যার কথা বলবেন বলে জানান আনিসুল হক, যিনি নিজে এই মামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

তাহলে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন “এমন সমস্যা কানাডার পক্ষ থেকে আছে, যেটা রাতারাতি অগ্রগতি হবে বলে আপনারা যদি মনে করেন, সেটা হবে না। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান বের করে এটা সমাধান করবে বলেই আশা রাখি।

“সেজন্য আমি বলব নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এখনও সম্ভাবনা আছে তাকে ফিরিয়ে আনার।”

পঁচাত্তরের পর পালিয়ে যাওয়া নূর চৌধুরী কানাডার টরন্টোতে রয়েছেন। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে ফেরত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল মৃত‌্যুদণ্ডবিরোধী কানাডা।

তবে গত বছর শেখ হাসিনা কানাডা সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে নূর চৌধুরীকে ফেরতের বিষয়ে আলোচনা করেন। সে সময় এ বিষয়ে অটোয়ার সুর নরম হয়।

কোন প্রক্রিয়ায় নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো হবে, তা খুঁজতে একমত হয় কানাডা সরকার।

নূর চৌধুরী ছাড়া বাংলাদেশের জাতির জনক হত‌্যাকাণ্ডে মৃত‌্যুদণ্ডের রায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন আরও পাঁচজন। এরা হলেন- আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)।

এছাড়া পলাতক আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গ

নতুন প্রধান বিচারপতি কবে নিয়োগ দেওয়া হবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের এইটুকু বলতে পারি যে, বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি একমাত্র এখতিয়ার এই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওৈয়ার। উনি দুটি কাজ রাষ্ট্রপতি হিসেবে করেন- একটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ।”

“এটা ওনার দায়িত্ব উনি এটা কবে পালন করবেন সেটা উনিই বলতে পারেন, আমি না।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পর সেখান থেকে সম্প্রতি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরসরি উত্তর এড়িয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি এ বিষয়ে আগে যা বলেছি এখনও তা বলব। সেটা হচ্ছে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”

বিদেশ যাওয়ার আগে বিচারপতি সিনহার দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো বিরল এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে ১১টি ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের’ কথা বলা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ, যা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে পেয়েছেন বলে সর্বোচ্চ আদালতে তার অন্য সহকর্মীদের উদ্ধৃত করে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।