বন্দরে লস্কর নিয়োগ নিয়ে অসত্য তথ্য দেওয়া হচ্ছে: নৌমন্ত্রী

চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর নিয়োগের পুরো খতিয়ান সংসদে তুলে ধরে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, এ নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2017, 03:28 PM
Updated : 20 Nov 2017, 03:37 PM

যারা সংসদে এর সমালোচনা করছেন, সেই মইন উদ্দিন খান বাদলের সুপারিশেও একজনের চাকরি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মন্ত্রী। 

এই নিয়োগ নিয়ে চট্টগ্রামের দুই সংসদ সদস্য জাসদের বাদল ও জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর বক্তব্যের পরদিন সোমবার সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন শাজাহান খান।

বন্দরের লস্কর পদে ৮৫ জনকে নিয়োগের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা উঠে, এখানে নৌমন্ত্রীর জেলা মাদারীপুরের প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের প্রার্থীরা ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন বলে রোববার সংসদে অভিযোগ করেন বাদল ও বাবলু। সোমবার চট্টগ্রামে এক সমাবেশ থেকে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে এই নিয়োগ বাতিলের দাবিও জানানো হয়।

নিয়োগ বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে কর্মসূচি

এই প্রেক্ষাপটে রোববার চট্টগ্রাম বন্দরে এক অনুষ্ঠানে এলাকাপ্রীতির অভিযোগ নাকচের পর সোমবার সংসদে বিবৃতি নিয়ে হাজির হন নৌমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ৯২ জনের কথা বলা হলেও লস্কর পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে ৮৫ জনকে। তারা চাকরির বিধান অনুযায়ী নিয়োগ পেয়েছেন।

নৌমন্ত্রী বলেন, চাকরির বিধান অনুযায়ী চতুর্থ শ্রেণি ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণিতে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর একটি মৌখিক পরীক্ষা হয়। আর দুই পরীক্ষায় যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়, সে অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। চতুর্থ শ্রেণির বেলায় শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

“এখানে যারা ভালো করে এবং স্বাস্থ্যগতভাবে যোগ্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কারণ লস্করের কাজটি একটি কায়িক শ্রমের। আর সেই সঙ্গে সব ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করা হয়েছে।”

তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ ভাগ, নারী কোটায় ১০ ভাগ, উপজাতি কোটায় ৫ ভাগ, আনসার-ভিডিপি কোটায় ৫ ভাগ, প্রতিবন্ধী কোটায় ৫ ভাগ এবং জেলা কোটায় ৪৫ ভাগ নিয়োগ দেওয়া হয়।

“এ ৮৫ জনকে যদি জেলা কোটায় চাকরি দেওয়া হত, আর চট্টগ্রাম জেলা কোটার কথা যদি আসে, তবে আগামী ৩০ বছরের মধ্যেও কিন্তু চট্টগ্রামের কোনো কোটায় চাকরি পাওয়ার কথা নয়। তারপরও চট্টগ্রাম বন্দর যেহেতু চট্টগ্রামে অবস্থিত। এখানকার লোকজনের জমির উপর তৈরি হয়েছে এ বন্দর। স্বাভাবিকভাবে তাদের একটি দাবি থাকে বিধায় আমরা চট্টগ্রামের এ বিষয়টি আমরা কোনো জেলা কোটায় ফেলি না।”

বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৯ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে চট্টগ্রামের ২৩ জন, কক্সবাজারের ৪ জন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের দুজন নিয়োগ পেয়েছেন।

নিয়োগ পাওয়া অন্যরা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, বগুড়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, হবিগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর জেলার বলে জানান তিনি।

শাজাহান খান

নৌমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বন্দরে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জন লোকের চাকরি দেওয়া হয়েছে । কখনও কোনো কথা উঠল না। এ সময়ে কথাটি কেন উঠল?”

এর উত্তরে তিনি নিজেই বলেন, “অভ্যন্তরীণ ঘটনা কিন্তু আমরা জানি। যিনি এ অভিযোগটি করলেন, তিনি হলেন মইন উদ্দিন খান বাদল। তিনি যে অভিযোগটি করেছেন, আমি তাকে জিজ্ঞাস করি, …এ ছেলেটির চাকরি তার অনুরোধে দেওয়া হয়েছে। তিনি কী করে এ অভিযোগটি করতে পারলেন,আমি জানি না।”

“এখানে যেহেতু শুধু মৌখিক পরীক্ষা হয় সেহেতু আমাদের অনেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী যারা আমাদের অনুরোধ করেন, আমরা সেভাবে দিয়ে থাকি। অনুগ্রহ করে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। আপনাদের এ বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিৎ,” বাদলের উদ্দেশে বলেন শাজাহান খান।

বাবলুর উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাবলু সাহেব চাকরির ব্যাপারে এ পর্যন্ত বলেননি। তার দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অনুরোধ করেছিলেন, তারও একটা অনুরোধ রাখা হয়েছে। বাবলু সাহেব বলেছেন, কেন ঢাকায় পরীক্ষা হয়?

“ঢাকায় পরীক্ষা হওয়ার কারণটা হল, অনলাইনে এখন আবেদন নেওয়া হয়। সেখানে ৭৪ হাজার আবেদন পড়েছে। এ ৭৪ হাজারের পরীক্ষাটি কোথায় নেব? চট্টগ্রামের সে ধরনের সক্ষমতা নেই। সে কারণে ঢাকায় পরীক্ষা নেওয়া হয়।”